আজ এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন গভর্নর
প্রকাশিত: রোববার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ (মার্জার) প্রক্রিয়া আজ রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে। এদিন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
পর্যায়ক্রমে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা সেরে ফেলতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একীভূতকরণে অনিশ্চয়তা
দীর্ঘ দেড় বছরেও উদ্যোগ আলোর মুখ না দেখার পর নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও এটি কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ হওয়ায় এ প্রক্রিয়ার স্থায়িত্ব নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো চূড়ান্ত করেনি—সব দুর্বল ব্যাংককে একত্র করে একটি নতুন ব্যাংক গড়া হবে, নাকি আলাদাভাবে প্রত্যেকটি ব্যাংককে শক্তিশালী ব্যাংকের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন—
“রোববার থেকে ব্যাংকগুলোর পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হবে। প্রথম দিনে একটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা, পরবর্তী দিনগুলোতে পর্যায়ক্রমে বাকিদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।”
তিনি জানান, এ সময় ব্যাংকগুলোর সম্পদের মান পর্যালোচনার (অ্যাসেট কোয়ালিটি রিপোর্ট বা একিউআর) পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে।
আর্থিক সংকটে ব্যাংকগুলো
একিউআর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আলোচিত পাঁচ ব্যাংকের মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ।
-
ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ: ৯৭.৮ শতাংশ
-
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ৯৬.৩৭ শতাংশ
-
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ৯৫ শতাংশ
-
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ৬২.৩ শতাংশ
-
এক্সিম ব্যাংক: ৪৮.২ শতাংশ
এক্সিম ব্যাংকের আপত্তি
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নয় এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন জানিয়েছেন, তারা আর্থিক অবস্থা উন্নতির তথ্য তুলে ধরে স্বতন্ত্রভাবে টিকে থাকার কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন।
অন্যদিকে গভর্নর আহসান মনসুর জানিয়ে দিয়েছেন—এক্সিম ব্যাংক যদি নগদ রিজার্ভ অনুপাত (সিআরআর), বিধিবদ্ধ তরল স্থিতি (এসএলআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার দায় শোধ করতে পারে, তবে একীভূতকরণ থেকে রেহাই পাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা
রোববার নিজস্ব পর্ষদ সভা ডেকেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। পরিচালনা পর্ষদের আলোচনার ভিত্তিতেই সোমবার গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে তাদের অবস্থান জানানো হবে।
বাজারে নেতিবাচক প্রভাব
একীভূতকরণ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। ইতোমধ্যেই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রকাশ ছাড়া একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সাফল্য বা টেকসই হওয়া নিয়ে কোনো ইতিবাচক বার্তা দেওয়া সম্ভব নয়।