প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কয়লার দাম নিয়ে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। একাধিক বৈঠক সত্ত্বেও সমাধান না হওয়ায় বিষয়টি আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে গড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আদানি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন,
“আদানি যদি সালিসের দিকে যায়, তা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এজন্য অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
বিরোধের পটভূমি
-
ঝাড়খন্ডের গোদ্দায় আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে—২০১৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী।
-
২০২৩ সালে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।
-
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কয়লার দাম প্রতি টন গড়ে ৬৫ ডলার হিসেবে ধরছে। কিন্তু আদানি চাইছে ৮০ ডলার।
-
এতে টনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ ডলারের ফারাক তৈরি হয়েছে।
বাড়তি চাপ ও বকেয়া বিল
-
অতীতে বৈদেশিক মুদ্রাসংকটে আদানির বিল বকেয়া হয়ে ৭০ কোটি ডলার পর্যন্ত গড়ায়।
-
বর্তমানে বেশির ভাগ পরিশোধ হলেও বাড়তি দাম ধরে আদানির দাবি অনুযায়ী প্রায় ২০ কোটি ডলার বকেয়া রয়ে গেছে।
-
জুলাইয়ে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকসহ কয়েক দফা আলোচনায়ও সমাধান হয়নি।
চুক্তির অসংগতি
বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানির সঙ্গে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি ‘অসম’।
-
বিল দেরিতে পরিশোধ করলে ১৫% পর্যন্ত সুদ ধরা আছে, যা অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে নেই।
-
পানি ব্যবহারের খরচসহ নানা অতিরিক্ত বোঝা বাংলাদেশকে বহন করতে হচ্ছে।
-
কয়লার মূল্য নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সূচকের (অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া) উচ্চমূল্যের গড় ধরা হয়, ফলে আদানি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে।
বিদ্যুতের খরচের তুলনা
-
আদানি বিদ্যুৎ: প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা।
-
ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমদানি: ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৪০ পয়সা।
-
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র: ইউনিটপ্রতি ১২ টাকার কম।
-
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র (চুক্তি নির্ধারণাধীন): ইউনিটপ্রতি ৮ টাকা ৪৫ পয়সা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
-
সাবেক উপদেষ্টা ম তামিম মনে করেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি সংশোধন করা উচিত। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে লড়াই করতে হবে।
-
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, “চুক্তি বহাল থাকলে আদানিকে বাড়তি বিল দিতেই হবে। স্থানীয় আদালতে অসম চুক্তির অভিযোগে মামলা করাই সরকারের জন্য শ্রেয়।”
👉 পরবর্তী পদক্ষেপ
আন্তর্জাতিক সালিসি প্রক্রিয়া শুরু হলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের আইনি ও আর্থিক লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। তবে সরকার বলছে, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
