প্রকাশিত: রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানকে দেশের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টিকে থাকার শক্তি দিয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেরিয়ট মার্কুইসে আয়োজিত ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশিজ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য
অধ্যাপক ইউনূস বলেন,
-
“আমাদের অর্থনীতি একেবারে নিচে নেমে গিয়েছিল। আপনাদের রেমিট্যান্সই তা বাঁচিয়েছে। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে আপনাদের প্রেরিত অর্থ।”
তিনি আশ্বাস দেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।
তরুণ জনশক্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আহ্বান জানান। পাশাপাশি কক্সবাজার-মাতারবাড়িকে গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা এবং বঙ্গোপসাগরের গ্যাস সম্পদ অনুসন্ধানের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাত রাজ্য সমুদ্রবন্দর সুবিধাবঞ্চিত। বাংলাদেশ তাদের জন্য সমুদ্র উন্মুক্ত করলে সবাই উপকৃত হবে এবং দেশটি আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রবাসীদের ভূমিকা
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। তিনি জানান, সরকারের পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে এবং গত এক বছরে বিদেশি বিনিয়োগ দ্বিগুণ হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রবাসীদের অবদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্যানেল আলোচনা
অনুষ্ঠানে ‘হারনেসিং ডায়াসপোরা অ্যাজ আ ন্যাশনাল অ্যাসেট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অন্যতম বড় সম্পদ এবং তারা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
অন্য এক সেশনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান সঞ্চালনা করেন। এতে বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকীবুর রহমান এবং এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ড. তাসনিম জারা বক্তব্য দেন।
তাসনিম জারা বলেন, নারী ও তরুণদের সম্পৃক্ত করে অংশগ্রহণমূলক বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। “যখন সবাই একসঙ্গে কাজ করে, ইতিহাস বদলায়। আমরা একসঙ্গে ইতিহাস বদলাব,” যোগ করেন তিনি।
এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনও বক্তব্য রাখেন।
শুভেচ্ছা অ্যাপ উদ্বোধন
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের জন্য ‘শুভেচ্ছা অ্যাপ’ উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে নাগরিক সেবা গ্রহণ, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের সুযোগ তৈরি হবে।
ব্যবসা, একাডেমিয়া, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি ও সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রবাসীদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি প্রবাসী সম্পৃক্ততার মাধ্যমে টেকসই সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

