স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলো ঘিরে চলমান লুটপাটে জড়িত হয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
কোণঠাসা আওয়ামী লীগ, তবুও সক্রিয় লুটপাট
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক অঙ্গনে কোণঠাসা হলেও সিলেট অঞ্চলের পাথর উত্তোলনে দলটির একাধিক নেতার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারাও এই লুটপাটে জড়িত বলে উঠে এসেছে তদন্তে।
রাজনৈতিক ঐক্য নামের লুটের মঞ্চ
পরিবেশবাদী ও স্থানীয় সূত্র বলছে, সিলেট থেকে গত কয়েক বছরে অন্তত ৪ কোটি ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে। প্রতি ট্রাকে ৫০০ ঘনফুট হিসেবে ধরা হলে প্রয়োজন হয়েছে অন্তত ৮০ হাজার ট্রাক। গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ট্রাকে ১০ হাজার টাকা কমিশন গিয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের পকেটে—যার পরিমাণ প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
কারা কারা জড়িত
গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, বিএনপি থেকে সিলেট মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্তত ১৮ জন নেতাকর্মী সরাসরি পাথর লুটে জড়িত। আওয়ামী লীগেরও একাধিক নেতা-কর্মীর নাম রয়েছে। জামায়াত ও এনসিপির নেতারাও এই লুটপাটের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও পাথর সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেতাদের নামও তদন্তে উঠে এসেছে।
প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং স্থানীয় থানার ওসিরা এ লুটপাটে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। এমনকি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের বিরুদ্ধেও কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
পাথর লুটের ঘটনায় শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, প্রশাসনের প্রায় সব স্তরের কর্মকর্তাদের নাম উঠে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসনের পকেটে গিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
দুদকের অবস্থান
দুদক ইতোমধ্যে এ ঘটনার প্রাথমিক প্রতিবেদন সদর দপ্তরে জমা দিয়েছে। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জড়িত যেই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান চালানো হবে।
পূর্ণাঙ্গ তালিকা আসছে
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জানিয়েছেন, পাথর লুটে জড়িতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে নির্দোষ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ চলছে।
পরিবেশ ও অর্থনীতির ক্ষতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথরের বাজারমূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর ফলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে ভয়াবহ পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে পড়েছে সিলেট অঞ্চল।
সংক্ষিপ্ত মন্তব্য:
পাথর লুটপাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগসাজশ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় গভীর ব্যর্থতার দিকটি সামনে এনেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ইতোমধ্যেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।