প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার | ঢাকা প্রতিবেদক
রাজধানীর যানজট নিরসন ও যাত্রীসেবা বাড়াতে রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে এক ঘণ্টা বাড়ছে মেট্রোরেলের চলাচলের সময়। নতুন সূচিতে সকালে আধাঘণ্টা আগে ও রাতে আধাঘণ্টা বেশি সময় ট্রেন চলবে।
এছাড়া আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানো হবে, ফলে দুই ট্রেনের মধ্যে বিরতি (হেডওয়ে) অন্তত দুই মিনিট কমে আসবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, চলাচলের সময় ও ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গত মাসেই নেওয়া হয়েছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়তি সময়ের ট্রেন চালানো শুরু হয়, এবং মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
নতুন সূচিতে সকাল-রাতের পরিবর্তন
বর্তমানে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে, নতুন সূচিতে এটি ছাড়বে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে।
এখন শেষ ট্রেন ছাড়ে রাত ৯টায়, নতুন সূচিতে ছাড়বে রাত সাড়ে ৯টায়।
অন্যদিকে মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায় (আগে ছিল সাড়ে ৭টা), আর শেষ ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টা ১০ মিনিটে (আগে ছিল ৯টা ৪০ মিনিট)।
শুক্রবারগুলোতেও পরিবর্তন আসছে—এদিন বিকেল ৩টার পরিবর্তে বেলা আড়াইটায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে, এবং রাতের সময় আধাঘণ্টা বাড়বে।
ডিএমটিসিএলের ব্যাখ্যা
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন,
“পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেলের সেবা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এজন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। আগামী রোববার থেকে দিনে এক ঘণ্টা বাড়তি সময় ট্রেন চালানো হবে। আর ট্রিপ বাড়ানোর বিষয়টি আগামী মাসের মাঝামাঝিতে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।”
ট্রিপ বাড়বে, কমবে অপেক্ষার সময়
বর্তমানে মেট্রোরেলে দৈনিক ২৩৮টি ট্রিপ চলছে, যার মধ্যে ১২ সেট ট্রেন সার্বক্ষণিকভাবে যাত্রী পরিবহন করছে।
ডিএমটিসিএল জানায়, সময় ও ট্রিপ বাড়ালে ১৯ সেট ট্রেন সার্বক্ষণিকভাবে চলবে।
বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে (পিক আওয়ার) ট্রেনের ব্যবধান ৬ মিনিট, অফ-পিক আওয়ারে ৮ মিনিট, আর একেবারে কম ব্যস্ত সময়ে ১০ মিনিট।
নতুন পরিকল্পনায় এ ব্যবধান যথাক্রমে ৪, ৬ ও ৮ মিনিটে নামিয়ে আনা হবে।
যাত্রীসংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, বর্তমানে মেট্রোরেলে দৈনিক গড়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী চলাচল করছেন। সময় ও ট্রিপ বাড়ালে এই সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচলের জন্য বর্তমানে ২৪ সেট ট্রেন রয়েছে, প্রতি সেটে ছয়টি কোচ। এর মধ্যে কিছু ট্রেন লাইন পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়।
যাত্রীদের সন্তোষ
মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী ও ট্রাভেল এজেন্সি কর্মকর্তা আরশাদুল হক বলেন,
“যানজটের শহর ঢাকায় মেট্রোরেল এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। সময় ও ট্রিপ বাড়ানো হলে অফিসগামী ও কর্মজীবী মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হবে।”
পটভূমি: বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল
২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হওয়া দেশের প্রথম মেট্রোরেল শুরুতে চালু হয় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত।
পর্যায়ক্রমে স্টেশনের সংখ্যা বাড়িয়ে ২০২৩ সালের শেষে মতিঝিল পর্যন্ত যাত্রী চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
প্রকল্পটি ২০১২ সালে অনুমোদিত হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকায়, বর্তমানে এর ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) প্রকল্পে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
