প্রকাশের তারিখ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নেতারা তহবিলের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ, বরাদ্দ অর্থ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেছেন। রবিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা এ কর্মসূচিতে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ভবনের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কক্ষে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তাঁদের আশ্বাসে ডাকসু নেতারা ভবন ত্যাগ করেন।
দাবির বিস্তারিত
আন্দোলনরত ডাকসু নেতারা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন:
-
তহবিলের স্বচ্ছতা:
২০১৯ সালের পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা ডাকসু ও হল সংসদের ফি বাবদ অর্থ দ্রুত ডাকসুর কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং অতীতের সব তহবিলের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশ করে স্বচ্ছ বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। -
ক্যাম্পাস নিরাপত্তা:
ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে, টোকাই ও মাদক চক্র নির্মূল করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। -
প্রশাসনের জবাবদিহিতা:
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী মিছিলে অংশ নেওয়া ডেপুটি রেজিস্ট্রার রুহুল আমিনসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক–কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন,
“আমরা দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাস পার করেও এখনো বাজেট হস্তান্তর পাইনি। এর ফলে আমাদেরকেই শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। গতকাল ক্যাম্পাসে হকার সরানোর উদ্যোগ নিলে বাম সংগঠনগুলো বহিরাগত এনে মিছিল করে— অথচ প্রশাসন তখনও নির্লিপ্ত থাকে।”
তিনি আরও বলেন,
“২০২৪ সালের ৩ আগস্ট কোষাধ্যক্ষ অফিসের কর্মকর্তা রুহুল আমিন খুনি হাসিনার পক্ষে মিছিল করেছিলেন। এখনো তিনি স্বাভাবিকভাবে অফিস করছেন— এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য চরম লজ্জার বিষয়।”
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি জুবায়ের বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা ক্যাম্পাসকে টোকাই ও মাদক চক্রমুক্ত করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই।”
প্রশাসনের অবস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহ–উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা ডাকসু নেতাদের দাবি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন,
“তহবিল সংক্রান্ত বিষয়গুলো ধাপে ধাপে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল।”
উপসংহার
ডাকসু নেতারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না এলে তাঁরা আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

