প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২৫, রোববার
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মবিরতির কারণে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
পুলিশের হামলার পর নতুন কর্মসূচি
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহারের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষক আহত হন। ওই ঘটনার পর আন্দোলনকারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, শাহবাগের ঘটনার পর তাঁরা শহীদ মিনারে ফিরে এসে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ও লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবি
১. সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা।
২. শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
৩. চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদান।
বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের ১৩তম গ্রেডে আছেন। এর আগে তাঁরা ১১তম গ্রেডের দাবি তুলেছিলেন, যা পরবর্তীতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার আহ্বানে পরিণত হয়েছে।
শাহবাগে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট
শনিবার বিকেলে শাহবাগে প্রাথমিক শিক্ষকদের মিছিল থামাতে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের দাবি, শিক্ষকরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন; বাধা অমান্য করলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। অন্যদিকে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বিনা উসকানিতে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।
সারাদেশে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয় ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। কর্মবিরতির কারণে আজ থেকে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
সরকারের অবস্থান ও সাম্প্রতিক অগ্রগতি
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব বিবেচনায় আছে। ইতিমধ্যে দেশের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষককে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে, যা সারা দেশের প্রধান শিক্ষকদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। শনিবার রাতে ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলা নিন্দনীয়। আমরা তাঁদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে আছি।”
শেষ কথা:
সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন এখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ না এলে শিক্ষা কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

