প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোর মো. রিহান মাহিনকে (১৫) হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে তাঁরা স্বীকার করেন, লাঠিসোঁটা, বিদ্যুতের তার ও কিলঘুষির আঘাতে মাহিনের মৃত্যু হয় এবং এতে অন্তত ৪০ জন অংশ নেয়।
গত শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোতাসিম বিল্লাহর আদালতে এই জবানবন্দি দেন আসামি আজাদ হোসেন (৩৬) ও মোহাম্মদ নোমান (৩৭)। তাঁদের মধ্যে নোমান একজন পল্লিচিকিৎসক এবং আজাদ গাড়িচালক।
ঘটনাপ্রবাহ
গত শুক্রবার ভোরে নগর থেকে বাড়ি ফিরছিল মাহিনসহ তিন কিশোর। কাঞ্চননগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাছে পৌঁছালে তাঁদের চোর অপবাদ দিয়ে আটক করা হয়। পরে স্থানীয়রা সেতুর সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে পেটাতে থাকেন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় মাহিন। গুরুতর আহত হয় তার দুই বন্ধু মুহাম্মদ মানিক ও মুহাম্মদ রাহাত। দুজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের একাধিক হাড় ভেঙে গেছে এবং রক্তের জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে।
নিহত মাহিনের মা খদিজা বেগম বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাতজনকে আসামি করা হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজাদ ও নোমানকে গ্রেপ্তার করে।
আসামিদের জবানবন্দি
আদালত সূত্র জানায়, আসামি আজাদ বলেন—
-
ছয় দিন আগে কবুতর চুরির ঘটনার অজুহাতে তিন কিশোরকে ধাওয়া করে ধরা হয়।
-
সেতুর সঙ্গে বেঁধে লাঠি, বিদ্যুতের তার ও কিলঘুষিতে মারধর করা হয়।
-
স্থানীয় বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন, সুমন, তানভীরসহ অন্তত ৪০ জন এতে অংশ নেন।
-
মারধরের একপর্যায়ে মাহিন জ্ঞান হারালে উপস্থিত পল্লিচিকিৎসক নোমান তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
অন্য আসামি নোমানও জবানবন্দিতে মারধরের ঘটনা স্বীকার করেন এবং নিজেই মাহিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলেন।
পুলিশের বক্তব্য
তবে ফটিকছড়ি থানার ওসি নুর আহমদ বলেন, “ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে ওই এলাকায় কোনো চুরির ঘটনা ঘটেনি। আসামিরা নিজেদের বাঁচানোর জন্য চুরির অজুহাত দিয়েছে। পূর্বের কোনো বিরোধ থেকে পরিকল্পিতভাবে কিশোরদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।”
মায়ের ক্ষোভ
মাহিনের মা খদিজা বেগম বলেন, “ছেলেকে বেঁধে মারধর করছে খবর পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে চোর নয়, বারবার বলার পরও আমার চোখের সামনে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। একটু পানি চাইছিল, ওকে পানি পর্যন্ত খেতে দিল না।”
👉 কিশোর মাহিন হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও গ্রেপ্তারসংক্রান্ত আরও আপডেট জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।