প্রকাশের সময়: রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | সকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন
সাভারের খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা কয়েক দফায় এই সংঘর্ষে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
ঘটনার সূচনা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল থেকে থুতু ফেললে তা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। রাত ৯টার দিকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, এবং সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিলের ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলে হামলা চালান। এতে কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর হয় ও কয়েকজন আহত হন।
সংঘর্ষের বিস্তার
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাত ১২টার পর প্রায় এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হন। পরবর্তীতে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে প্রশাসনিক ভবন ও অন্যান্য স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর চালান।
সংঘর্ষ চলাকালে কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম লুটপাট করা হয়, তিনটি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়া হয়, এবং অন্তত পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুরের শিকার হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সংঘর্ষের সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
আহত ও ক্ষয়ক্ষতি
রাতভর সংঘর্ষে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, তবে কারো অবস্থা গুরুতর কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চললেও পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব) ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্টে বলা হয়,
“প্রতিবেশী দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিবাদ থাকতে পারে, কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে ভাঙচুর, সম্পদ নষ্ট ও সহপাঠীদের আহত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
পুসাবের দাবি, দুই পক্ষের দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক— যারা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে নির্যাতন করেছে এবং যারা ড্যাফোডিল ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়েছে, তাদের সবাইকে সমানভাবে জবাবদিহিতার মুখে দাঁড় করাতে হবে।
প্রশাসনের অবস্থান
ঘটনার বিষয়ে সাভার থানার ডিউটি অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান জানান,
“আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন আর কোনো অস্থিরতা না ঘটে।”
সার্বিক পরিস্থিতি
এ ঘটনায় দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনলে পুনরায় সংঘর্ষের ঝুঁকি রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে।
উপসংহার:
তুচ্ছ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের এমন সহিংস সংঘর্ষ উদ্বেগজনক। শিক্ষাঙ্গনে সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্মান ও আইনি শাসনের সংস্কৃতি না গড়ে উঠলে এ ধরনের সহিংসতা আরও ঘনঘটিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
									 
					