প্রকাশের তারিখ: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
লেখক: আন্তর্জাতিক ডেস্ক, প্রবাস বুলেটিন
গাজা-মুখী ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (FFC) নৌবহর আটক করার পর বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমসহ জাহাজে থাকা সব সাংবাদিক, চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মীদের ইসরায়েলের কেতজিয়েত (Ketziot/Ktziot) কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রোটিলা ও ইসরায়েলের অধিকার সংগঠন আদালাহ — তথ্যটি সতর্কতায় প্রকাশ করেছে শহিদুল আলমের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা দৃক।
দৃকের ফেসবুক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফ্লোটিলা অ্যাক্টিভিস্টরা আদালাহর আইনজীবীদের জানিয়েছেন—জাহাজ দখল নেওয়ার সময় থেকে তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সহিংসতা চালানো হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিরাও প্রতিদিন একই বা তারচেয়েও ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বিজ্ঞপ্তিতে সতর্কাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আটককৃতদের আশদদ (Ashdod) বন্দরে নেওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে কেতজিয়েত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
কিভাবে ঘটলো — সংক্ষিপ্ত ক্রোনোলজি
ফ্রিডম ফ্লোটিলা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়, Conscience নামের একটি জাহাজসহ নৌবহরটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় যখন গাজার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল, তখন ইসরায়েলি নৌবাহিনী জাহাজগুলো আটক করে। অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত নৌবহর ‘Sumud/Thousand Madleens’ ও অন্যান্য শিপিং অংশ নিয়ে তদন্ত করে বলছে—রাতের কোনো এক পর্যায়ে নৌবহরটিকে বোর্ড করে অভিযুক্তরা ধারাবাহিকভাবে আটক করা হয়। পরে কন্টিনজেন্টদের কিছু অংশ আশদদ বন্দরে নেওয়া এবং অনেকে পরে ইসরায়েলি মামলায় রেকর্ডিং হয়ে কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
আটকজনদের বিষয়ে অভিযোগ ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আটকরা এবং তাদের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করছেন — তারা জিপ-টাই, কাপড়পাটা পরিয়ে অন্ধ করে রাখা, চিকিৎসা সুবিধা নিবার অনুপস্থিতি ও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডার্স (RSF) ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলে এসেছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। একই সঙ্গে ইউরোপিয়ান সদস্যসভার কিছু প্রতিনিধি ও বিশ্বনেতারা দ্রুত মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছেন। ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের অবস্থান— নৌ অবরোধ বজায় রেখে সাগরে আটকানো তাদের আইনি অধিকার বলে—প্রকাশ করেছে।
কেতজিয়েত কারাগার এবং বন্দিসংখ্যা
আদালাহ ও বিভিন্ন সংগঠনের সূত্রে বলা হয়েছে, নেগেভ মরুভূমির কেতজিয়েত কারাগারে হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি ও অন্যান্য আটক ব্যক্তিদের রাখা হয়। ফ্লোটিলা অ্যাক্টিভিস্টরা তুলে ধরেছেন—কারাগারে শর্তাবলী উদ্বেগজনক এবং সেখানে তাদের নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নজরদারি প্রয়োজন।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ও দাবি
বৃহস্পতিবার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠন ও শিল্পী ও সাংবাদিকদের একাংশ দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহলও আটক শহিদুল আলমের জন্য কূটনৈতিক সাহায্যের অনুরোধ করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। (দৈনিক ও অনলাইন সূত্রসমূহ)।
পরবর্তী পরিস্থিতি ও বিচার্যের আহ্বান
ফ্লোটিলা আটক ও কারাবন্দি করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও সমুদ্র আইনের দায়-দায়িত্ব, আটককৃতদের কাছে আইনি পর্যবেক্ষণ পৌঁছয় কি না, এবং তাদের সুরক্ষা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে—এসব দিক এখন ত্বরিতভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আদালাহ ও অন্যান্য আইনগত প্রতিনিধিরা প্রতিনিধিত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন — আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক ও আইনি চাপে মুক্তির পথ খোলা না গেলে বিষয়টি বড় কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে রূপ নেবে বলেই সতর্ক করছে অধিকার সংগঠনগুলো।
উপসংহার:
ফ্রিডম ফ্লোটিলার এই অধিকতর প্রতিকূল ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাঁপতে বাধ্য হয়েছে। আটকাদি—বিশেষত শহিদুল আলম—এর দ্রুত, নিরাপদ ও সম্মানজনক মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো অবৈধ আচরণ থাকলে তা তদন্ত করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি উঠেছে। আন্তর্জাতিক সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন প্রতিনিয়ত নজর রাখছে; সরকারের ও কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর কার্যকর উদ্যোগ অনিবার্য।
সূত্র ও আরও পড়তে:
দৃক (Drik) — প্রকাশনাগত বিজ্ঞপ্তি/ফেসবুক পোস্ট; বাংলাদেশ নিউজ রিপোর্টিং (bdnews24, Dhaka Tribune, The Daily Star); আন্তর্জাতিক সংবাদ (The Guardian, AP, The Art Newspaper); মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতি
