প্রকাশের তারিখ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক
সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর—এবং তার পরের যেকোনো সময়ে দল বা দলের সদস্যদের কোনো ভুলের কারণে যদি জাতি বা ব্যক্তি কষ্ট পেয়ে থাকে, তার জন্য নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন স্থানীয় সময় বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন,
“শুধু একাত্তর না, সাতচল্লিশ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের দ্বারা যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন—আমরা বিনা শর্তে, ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে, সকলের কাছে ক্ষমা চাই। এটা গোটা জাতি হলেও চাই, ব্যক্তি হলেও চাই।”
একাত্তর প্রসঙ্গে জামায়াত আমির
শফিকুর রহমান বলেন,
“জামায়াতের নাম এলেই একাত্তরের প্রসঙ্গ চলে আসে। তখন জামায়াত বিশ্বাস করেছিল পাকিস্তান একত্রে থাকা দরকার। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা তখন পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করতেন, রেশন নিতেন—সেটা আমাদের কাছে আপত্তির বিষয় ছিল না। কারণ সেটা ছিল সরকারের নাগরিক দায়বদ্ধতার অংশ।”
তিনি বলেন,
“তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, জনপ্রত্যাশা ছিল স্বাধীনতার পক্ষে, জামায়াত তখন কেন সেই প্রত্যাশাকে সম্মান করেনি? এটা একটি লেজিটিমেট প্রশ্ন। করলে ভালো হতো, করা উচিত ছিল। এ ব্যাপারে আমার কোনো দ্বিমত নেই। তবে সেই সময়কার প্রেক্ষাপট ও সিদ্ধান্ত তাঁদের জীবিত নেতারাই ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতেন।”
পূর্ববর্তী ক্ষমা প্রার্থনার উল্লেখ
জামায়াতের আমির বলেন,
“আমাদের প্রতি জাতির কিছু অংশের ক্ষোভ ছিল—তারা বলেছে, আপনারা রাজনৈতিকভাবে ভুল করেছেন, অন্তত একটি ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। আমরা এই ক্ষমা তিনবার চেয়েছি। প্রফেসর গোলাম আজম সাহেব, মাওলানা মতিউর রহমান সাহেব, এবং আমি নিজেও চেয়েছি।”
তিনি আরও যোগ করেন,
“সম্প্রতি এটিএম আজহারুল ইসলাম সাহেব জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আমি আবার বলেছি—সাতচল্লিশ থেকে শুরু করে যদি জামায়াতের কারণে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমরা বিনা শর্তে ক্ষমা চাই। কোনো শর্ত দিইনি, কোনো ব্যাখ্যা দিইনি।”
‘আমরা মানুষ, ভুল হতেই পারে’
নিজ দলের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে শফিকুর রহমান বলেন,
“আমরা মানুষ। একশটি সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। সেই ভুলের কারণে জাতির ক্ষতি হয়ে থাকলে তার জন্য মাফ চাইতে আমাদের কোনো দ্বিধা নেই। আজ আমরা আবারও স্পষ্ট করে বলছি—আমাদের জানা-অজানা সব ভুলের জন্য জাতির কাছে আমরা দুঃখিত।”
তিনি বলেন,
“যারা আমাদের ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। ভুলের ঊর্ধ্বে কোনো দল বা ব্যক্তি নয়—এ কথা আমরা বিশ্বাস করি।”
উপসংহার
জামায়াতে ইসলামীর আমিরের এই বক্তব্যে দলের অতীত ভূমিকা, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তাঁর দাবি, দলের নতুন প্রজন্ম এখন ইতিবাচক ও পরিবর্তনমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী, এবং অতীতের ভুলের দায় এড়িয়ে নয়, বরং জাতির সঙ্গে নতুন করে আস্থা গড়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য।
