প্রকাশের সময়: সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | ঢাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে। নির্বাচনী তৎপরতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও, দলের ভেতরে চলছে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
লন্ডন থেকে সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন তিনি। দলীয় অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের একটি ফোন কলই এখন নির্ধারণ করছে কে পাচ্ছেন বিএনপির টিকিট, আর কে বাদ পড়ছেন আসন দৌড় থেকে।
🔹 মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় তারেক রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা
বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া অতীতের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ও কেন্দ্রীভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিটি আসনে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা, মাঠপর্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখছেন তারেক রহমান নিজে।
দলের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, তিনি অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতাদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি একটি “গ্রিন সিগন্যাল লিস্ট” তৈরি করেছেন, যেখানে নির্বাচনী টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“এবার সিনিয়রিটি নয়, মাঠের বাস্তবতা ও জনগণের পছন্দই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তারেক রহমানের হাতে প্রতিটি আসনের বিস্তারিত রিপোর্ট আছে। যারা এলাকায় সক্রিয়, গ্রহণযোগ্য এবং তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয় — তারাই এখন কাঙ্ক্ষিত ফোন কল পাচ্ছেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নতুন কৌশল দলের ভেতরে একটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে, যা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন মাত্রা আনবে।
🔹 ঢাকা বিভাগের প্রার্থী তালিকায় তরুণ নেতৃত্বের উত্থান
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনে ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা তারেক রহমানের ফোন পেয়েছেন।
ঢাকার রাজনীতিতে এই তালিকা বিএনপির নতুন মেরুকরণ ও তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনার ইঙ্গিত বহন করছে।
যেসব প্রার্থী প্রাথমিকভাবে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে:
- 
ঢাকা–৩: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
 - 
ঢাকা–৪: তানভীর আহমেদ রবিন
 - 
ঢাকা–৬: ইশরাক হোসেন
 - 
ঢাকা–৮: মির্জা আব্বাস
 - 
ঢাকা–১০: ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম
 - 
ঢাকা–১২: নবী সোহেল
 - 
ঢাকা–১৩: ববি হাজ্জাজ
 - 
ঢাকা–১৫: মামুন হাসান
 - 
ঢাকা–১৬: আমিনুল হক
 
সবচেয়ে আলোচিত নাম ঢাকা–১৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলি, ‘মায়ের ডাক’ আন্দোলনের সমন্বয়কারী এবং গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন। তাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান নিজে।
অন্যদিকে ঢাকা–১৭ আসনটি জোটসঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা জোটের রাজনীতিতে বিএনপির কৌশলগত নমনীয়তার ইঙ্গিত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
🔹 সারা দেশে মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত
বিএনপির হাইকমান্ড সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০টি আসনে প্রার্থী নিয়ে কোনো মতভেদ নেই—এই আসনগুলোকে দল ‘নিরাপদ আসন’ হিসেবে বিবেচনা করছে।
এই তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকেই:
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা–১), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও–১), ড. আব্দুল মঈন খান (নরসিংদী–২), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ–২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার–১), মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা–৩), বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী–৩), শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর–৩), ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর–৫), ব্যারিস্টার নওশাদ জমির (পঞ্চগড়–১) প্রমুখ।
🔹 দলের ভেতরে ঐক্য ও শৃঙ্খলার ওপর জোর
দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের কাছে হাইকমান্ড থেকে কঠোর নির্দেশনা পৌঁছেছে—
“যাকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে, সবাইকে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। কোনো কোন্দল বা বিভক্তি সহ্য করা হবে না।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,
“যারা এলাকায় জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য, তারাই মনোনয়ন পাবেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই তৃণমূল পর্যন্ত খোঁজ নিয়েছেন। শিগগিরই চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হবে।”
🔹 জোট রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য খোঁজ
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন,
“বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত কীভাবে আসন ভাগ হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়, তবে বিএনপি সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায়।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিএনপি এবার তরুণ, পেশাজীবী ও তৃণমূলভিত্তিক নেতৃত্বকে সামনে এনে নির্বাচনী লড়াইয়ে নতুন চেহারা উপস্থাপন করতে চায়, যা তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হতে পারে।
🔹 সমাপনী বিশ্লেষণ
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির এই কেন্দ্রীভূত ও তথ্যভিত্তিক মনোনয়ন প্রক্রিয়া দলটির নির্বাচনী কৌশলের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করছে।
তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধান বিএনপির ওপর তার দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্তক্ষমতা আরও স্পষ্ট করছে। একই সঙ্গে এই প্রক্রিয়া যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন ও দলীয় ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
📌 উপসংহার:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণ প্রক্রিয়া এবার শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং কৌশলগত ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হয়ে উঠেছে।
এই প্রক্রিয়ায় তারেক রহমানের সরাসরি নেতৃত্ব ও ‘ফোন কল রাজনীতি’—আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
									 
					