গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন দেশের অর্থনীতির ভার গ্রহণ করে, তখন সেটি প্রায় অসম্ভব এক কাজ বলে মনে হয়েছিল। তবে এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতার পথে ফিরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) নিজের অফিশিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অর্থনীতির পতন রোধ করতে এবং গতি ফিরিয়ে আনতে আমাদের সাহসী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি কঠোর করা, কৃচ্ছ্রসাধন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
তিনি জানান, সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে সম্পদের মান যাচাই, ব্যাংক খাতে কাঠামোগত সংস্কার, চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার, তারল্য নিশ্চিতকরণ এবং কর প্রশাসনে সংস্কার আনা হয়েছে। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়।
ড. ইউনূস বলেন, “আজ এক বছর পর পেছনে তাকালে দেখা যায়—বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বে যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তাদের তুলনায় বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। এখানে মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইরান কিংবা রাশিয়ার মতো দেশগুলোতে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের পর ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বরং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। জুলাই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূচক (ডিএসইএক্স) ১২.৫ শতাংশ বেড়ে বিশ্ববাজারে তৃতীয় অবস্থানে ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রবাসীদের আস্থা ফিরে আসায় বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ বেড়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী হয়েছে। এছাড়া আর্থিক ব্যবস্থাপনার মান উন্নত হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থাও ফিরেছে।
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে আর্থিক খাতে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ব্যয় কমানো, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হ্রাসে নতুন উদ্যোগ এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষায় সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, দৃঢ় নীতি, স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতি, সুসংহত আর্থিক ব্যবস্থা ও পুঁজিবাজারের ইতিবাচক প্রবণতা আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও উন্নতির পথে নিয়ে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরীর লেখা সংশ্লিষ্ট আর্টিকেল সোমবার ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত হয়েছে।