প্রকাশের তারিখ: শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ববাজারে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূল্য এখন ২০২২ সালে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের চেয়েও কম। এর প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ইতোমধ্যে পড়েছে—ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ভোক্তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির বোঝা বহন করছেন।
ডলারের দামের অজুহাত
বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ডলারের দামকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। বর্তমানে টাকার বিপরীতে ডলারের দর আগের তুলনায় অনেক বেশি। তবে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ডলারের প্রভাব থাকলেও দেশের বাজারে পণ্যমূল্য আরও কমানোর সুযোগ রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণ
-
আমদানি পর্যাপ্ত না হলে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়, যা দাম বাড়ায়।
-
প্রতিযোগিতা না থাকলে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই দাম নির্ধারণ করে, ভোক্তারা অসহায় হয়ে পড়ে।
-
কার্যকর সরকারি তদারকি না থাকায় পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “শুধু ডলার–নির্ভর ব্যাখ্যা দিয়ে দায় এড়ানো যাবে না। বিশ্ববাজারে যখন দাম কমছে, তখন দেশের ভোক্তারাও সেই সুফল পাওয়ার অধিকার রাখেন। যথেষ্ট আমদানি ও প্রতিযোগিতা থাকলে বাজার স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থিতিশীল হয়।”
দক্ষিণ এশিয়ার তুলনা
-
ভারত: আগস্ট মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৪ শতাংশের কাছাকাছি।
-
পাকিস্তান: গত বছরের দ্বিগুণ দামের চাপ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে।
-
শ্রীলঙ্কা: দেউলিয়া সংকট কাটিয়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি এখন এক অঙ্কে।
-
বাংলাদেশ: টানা কয়েক মাস ধরে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।
ভোক্তাদের দুর্ভোগ
রাজধানীর শ্যামলী এলাকার গৃহিণী শিউলি বেগম বলেন, “টেলিভিশনে দেখি আন্তর্জাতিক বাজারে তেল আর গমের দাম কমছে। কিন্তু আমাদের দেশে তো উল্টো—তেল, ডাল, চাল, সবকিছুর দামই বাড়ছে। মজুরি বাড়েনি, অথচ বাজারদর প্রতিদিন নতুন রেকর্ড করছে।”
নীতি–পর্যায়ের সংকেত
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে—
-
আমদানি বাড়ানো,
-
বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা,
-
সবল মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা—
এসবের বিকল্প নেই।
👉 প্রবাসী পাঠকদের জন্য গুরুত্ব: আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিবারের খরচ বহন কঠিন করে তুলেছে। ফলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই, সঞ্চয় বা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।