📅 ঢাকা | মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে চীনের সঙ্গে বাড়তে থাকা সহযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মনে করছে, ঢাকা সামরিকভাবে বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকছে—যা ভবিষ্যতে কৌশলগত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন সম্প্রতি মার্কিন সিনেটের শুনানিতে এ বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেছেন।
🔹 থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট–২০২৫: চীনের অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা উদ্যোগ
ওয়াশিংটন ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা বাজারে চীনের প্রভাব ঠেকাতে ‘থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট–২০২৫’ নামে নতুন আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ আইনের আওতায় চীন থেকে সমরাস্ত্র কিনলে নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
আইনটি ২৩ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে উপস্থাপন করে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীনের সমরাস্ত্র বিক্রি কেবল অর্থনৈতিক বিষয় নয়, বরং এটি বেইজিংয়ের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশল।
🔹 যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন: অস্ত্র বিক্রির আড়ালে চীনের ৯টি লক্ষ্য
ওয়াশিংটনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীন অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে—
- 
নিজের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও সক্ষমতা বাড়াতে,
 - 
অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষায়,
 - 
যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যগত অংশীদারদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে,
 - 
নির্দিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করতে,
 - 
বিদেশি রাজনৈতিক–সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে,
 - 
কূটনৈতিক প্রভাব বাড়াতে,
 - 
বিদেশে বিনিয়োগ ও কর্মী সুরক্ষায় সুবিধা পেতে,
 - 
সংঘাতপ্রবণ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে এবং
 - 
নিজস্ব সামরিক শিল্পের গবেষণা ও উৎপাদনে অর্থায়ন বাড়াতে সচেষ্ট।
 
🔹 সিনেট শুনানিতে বাংলাদেশের নাম
গত ২৪ অক্টোবর সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে শুনানিতে অংশ নেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন, যিনি এর আগে (২০১৯–২০২১) ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলর ছিলেন।
রিপাবলিকান সিনেটর পিট রিকেটস বলেন,
“বাংলাদেশ ও কমিউনিস্ট চীনের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। চীন সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সাবমেরিন ঘাঁটি সংস্কার করেছে এবং অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ ২০টি চীনা জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার অনুমোদন দিয়েছে।”
তিনি প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলে কীভাবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বাংলাদেশের নেতৃত্বকে চীনা অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে দূরে রাখবেন।
জবাবে ক্রিস্টেনসেন বলেন,
“দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে আমি একমত। ঢাকায় দায়িত্ব পেলে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করব—চীনের কার্যক্রম, সামরিক সম্পৃক্ততা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় তাদের ভূমিকার ঝুঁকি সম্পর্কে।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চায় এবং যৌথ মহড়া ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে বিকল্প সামরিক সক্ষমতা প্রদানের পরিকল্পনা করছে।
🔹 চীনা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা
যুক্তরাষ্ট্র শুধু নতুন অস্ত্র কেনাই নয়, পুরোনো চীনা অস্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রিও সীমিত করতে চায়। এজন্য মার্কিন প্রশাসন অংশীদার দেশগুলোকে আইনগত ঝুঁকি ও নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা সম্পর্কে অবহিত করবে।
🔹 ঢাকার অবস্থান: স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা চীনের
অন্যদিকে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন,
“চীন বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে। বাংলাদেশের নীতি কোনো বিদেশি শক্তির নির্দেশনায় পরিচালিত হয় না।”
তিনি বলেন, বেইজিং চায় ঢাকা নিজের জাতীয় স্বার্থ ও শক্তির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিক, এবং চীন সবসময় সেই অবস্থানকে সমর্থন করবে।
🔹 ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তিগত দিক থেকে চীন এখন অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে। বিরল ধাতু ও উন্নত প্রযুক্তির প্রাপ্যতা তাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ ও ‘কোয়াড জোট’–এর মাধ্যমে চীনের গতিপথ রোধে সচেষ্ট।
									 
					