প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ঢাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। এতে সারাদেশের ডিগ্রি প্রকৌশলীদের যোগদানের আহ্বান জানানো হলেও এর আগে থেকেই ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টরা নিয়মিত আন্দোলন করে আসছিলেন। ফলে প্রকৌশল শিক্ষার দুই স্তর—ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা—নিয়ে নতুন করে বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
আন্দোলনের পটভূমি
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আন্দোলনের মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণ। আনসারদের পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির দাবি, ফেল করা শিক্ষার্থীদের অটো প্রমোশনের দাবি, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীর মর্যাদা পাওয়ার দাবি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে নানা ধরনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। কেউ দাবি করছেন, ডিপ্লোমাধারীরাও আইআইটি বা এমআইটির গ্র্যাজুয়েটদের সমকক্ষ; কেউবা ছোট আকারের বিমান বা ড্রোন বানানোর উদাহরণ টেনে বুয়েটের দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
বুয়েটের ভূমিকা ও বাস্তবতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের তুলনা বিভ্রান্তিকর। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)কে সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশার একটি নিরাপদ নকশা তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছিল। গবেষণার ভিত্তিতে তা তারা সম্পন্ন করে। এর মানে এই নয় যে বুয়েট শুধু রিকশা বানায়; বরং তাদের কাজ হচ্ছে উচ্চতর গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা।
বুয়েট এবং দেশের অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা গ্র্যাজুয়েটরা নাসা, বোয়িং, রোলস রয়েস, সিলিকন ভ্যালি থেকে শুরু করে বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। একইভাবে চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট কিংবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরাও দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টদের ভূমিকা
ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টরা সাধারণত এসএসসি পাসের পর চার বছরের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করেন। বাস্তবভিত্তিক কাজে তাঁদের দক্ষতা থাকলেও তাঁরা গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলী নন। আন্তর্জাতিকভাবে কারিগরি শিক্ষায় তিনটি স্তর নির্ধারিত আছে—
-
প্রকৌশলী (Engineer): ওয়াশিংটন অ্যাকর্ডের আওতাভুক্ত।
-
ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিস্ট: সিডনি অ্যাকর্ডের আওতাভুক্ত।
-
ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিশিয়ান: ডাবলিন অ্যাকর্ডের আওতাভুক্ত।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও ডিপ্লোমাধারীরা সরাসরি প্রকৌশলী হিসেবে নিবন্ধিত হন না। তবে তাঁরা উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করলে প্রকৌশলীর মর্যাদা পেতে পারেন।
অন্যায্য দাবি নিয়ে সমালোচনা
ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্টদের জন্য সরকারি চাকরিতে বিশেষ কোটা ও পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও সমালোচনা হচ্ছে তাঁদের “প্রকৌশলী” উপাধি দাবি করা নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেমন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা ডাক্তার বা কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা কৃষি কর্মকর্তার পদ পান না, তেমনি ডিপ্লোমাধারীদেরও গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলীর মর্যাদা দেওয়া অন্যায্য।
তবে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এবং বাস্তবভিত্তিক কাজের সুযোগ বাড়াতে টেকনিশিয়ান ও ডিপ্লোমাধারীদের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
উপসংহার
বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি অত্যাবশ্যক। এ ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েট প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান—সবাইকে আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যায্য দাবি না তুলে যৌক্তিক ভূমিকা রাখলেই দেশের প্রকৌশল খাত আরও শক্তিশালী হতে পারবে।