প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বছর এক ভরি সোনার দাম ছিল মাত্র ১৭০ টাকা। ৫৪ বছর পর এসে সেই সোনা এখন ভরিপ্রতি ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। বিশ্ববাজারে ক্রমবর্ধমান দামের প্রভাবেই দেশে সোনার এমন রেকর্ড দাম দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ববাজারে সোনার উল্লম্ফন
-
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ২০২০ সালে আউন্সপ্রতি সোনার দাম প্রথমবারের মতো ২,০৭০ ডলার ছাড়ায়।
-
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ৩,৪০০ ডলার হয়।
-
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩,৬৫৪ ডলার ছাড়িয়েছে।
-
এএনজেড গ্রুপের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছরের শেষ নাগাদ দাম আউন্সপ্রতি ৩,৮০০ ডলার হতে পারে এবং আগামী জুনে তা ৪,০০০ ডলার ছাড়াতে পারে।
কেন এত দাম বাড়ছে?
অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়লেই সোনার বাজার চাঙ্গা হয়। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশ্ববাজারে মন্দার শঙ্কা এবং মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদহার হ্রাসের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
পুরোনো অলংকার বিক্রিতে মুনাফা
উচ্চ দামের এই সময়ে পুরোনো অলংকার বিক্রি করলে ভালো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।
-
উদাহরণস্বরূপ: ১০ বছর আগে ২২ ক্যারেটের এক ভরি অলংকারের দাম ছিল প্রায় ৪৩ হাজার টাকা।
-
এখন সেটি বিক্রি করলে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩৬ টাকা।
-
অর্থাৎ ভরিপ্রতি মুনাফা হচ্ছে ১ লাখ ১১ হাজার ৩৩৬ টাকা।
তবে জুয়েলার্সরা সাধারণত পুরোনো অলংকারের বর্তমান ওজন থেকে ১৭% বাদ দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করে। অন্য দোকানে বিক্রি করলে ২২–২৪% পর্যন্ত বাদ দিতে পারে।
বিনিয়োগের ঝুঁকি
বাংলাদেশে সোনায় সরাসরি বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত। সাধারণ মানুষ অলংকার কিনেই বিনিয়োগ করেন। তবে অলংকার কিনতে গেলে সোনার দাম ছাড়াও ৫% ভ্যাট ও মজুরি দিতে হয়। ফলে ভরিপ্রতি অলংকার কিনতে প্রায় দুই লাখ টাকা লাগে।
ব্যবসায়ীদের মতে, এত অস্থির বাজারে নতুন অলংকার কেনা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অলস পড়ে থাকা টাকা সোনায় বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে লাভজনক হতে পারে।
জুয়েলার্স সমিতির পরামর্শ
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন,
“সোনার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ নতুন অলংকার কিনছেন না। তবে পুরোনো অলংকার বিক্রি করলে এখন ভালো মুনাফা মিলবে। যদি কিনতেই হয়, তবে ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কিনতে হবে, তাহলেই মানসম্মত সোনার নিশ্চয়তা থাকবে।”
হলমার্ক বাধ্যতামূলক
২০০৭ সাল থেকে দেশে সোনার অলংকারে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে অলংকারে কতটুকু বিশুদ্ধ সোনা আছে তা খোদাই করে লেখা হয় এবং রসিদে উল্লেখ থাকে। তবে এখনও মফস্সলের অনেক ছোট দোকান এই নিয়ম মানে না।
সোনার বিশুদ্ধতার মান
-
২২ ক্যারেট: ১৪ আনা ২ রতি বিশুদ্ধ সোনা
-
২১ ক্যারেট: ১৪ আনা
-
১৮ ক্যারেট: ১২ আনা
-
সনাতন অলংকার: সর্বোচ্চ ১০ আনা
👉 অর্থনীতির অস্থিরতার সময়ে সোনা বিশ্বজুড়েই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশি ভোক্তাদের জন্য প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এখনই নতুন অলংকার কিনবেন, নাকি পুরোনো অলংকার বিক্রি করে লাভ তুলবেন?