বুধবার, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশিত: রোববার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন উচ্ছেদে একের পর এক উদ্যোগ নিয়েও সফল হতে পারেনি সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এ ব্যর্থতা যেমন ছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দায়িত্ব নিয়ে চেষ্টা চালালেও বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। ফলে নছিমন, করিমন, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন এবং ২০–২৫ বছরের পুরোনো বাস-ট্রাক এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কে। এর প্রভাব পড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিতে।

সড়কে অবৈধ যানবাহনের দাপট

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত বৈধ যানবাহন আছে প্রায় ৬৪ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে গণপরিবহন (বাস-মিনিবাস) ২ শতাংশেরও কম। অথচ এর প্রায় ৪৬ শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। অন্যদিকে সরকারের বিবেচনায় অবৈধ তিন চাকার ছোট যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নছিমন, করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও পাখি।

দুর্ঘটনায় প্রাণহানির চিত্র

বিআরটিএর হিসাবে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৪১ জন। এর মধ্যে ৭৮৬ জন (২১%) ছিলেন তিন চাকার ছোট যানের আরোহী। সর্বোচ্চ নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় (৩২%)।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে মোট ৭ হাজার ২৯৪ জন নিহত হন সড়ক দুর্ঘটনায়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ছিলেন ২,৬০৯ জন (৩৫.৭৭%), আর তিন চাকার যানবাহনে নিহত ১,৭২৩ জন (২৩.৬১%)

উচ্ছেদে বাধা ও অচলাবস্থা

বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অবৈধ তিন চাকার যানবাহন বন্ধে বরাবরই সোচ্চার বাস-ট্রাক মালিক-শ্রমিক সংগঠন। কিন্তু পুরোনো বাস-ট্রাক উচ্ছেদের ক্ষেত্রে তারা বারবার ধর্মঘট ডেকে অভিযানের পথ রোধ করে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে পুরোনো বাস-ট্রাক উচ্ছেদে অভিযান চালালেও ধর্মঘটের হুমকিতে তা কার্যত থেমে যায়। গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া অভিযানে মাত্র ৫১টি পুরোনো যানবাহন জব্দ করা সম্ভব হয়।

সরকারের পরিকল্পনা

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. এহছানুল হক জানিয়েছেন, “অভিযান বন্ধ হয়নি। পুরোনো বাস-ট্রাক ধাপে ধাপে উচ্ছেদ করা হবে। পাশাপাশি নতুন যানবাহন নামাতে পরিবহন মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ ও আমদানিনীতি সংশোধনের উদ্যোগ চলছে।”
এ ছাড়া নতুন ও পুরোনো বাস আমদানির বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। বর্তমানে পাঁচ বছরের পুরোনো বাস আমদানি করা যায়, সরকার তা সাত বছর করার পরিকল্পনা করছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামান বলেন, “অবৈধ তিন চাকার বিপুলসংখ্যক যানবাহন কারিগরিভাবে ত্রুটিপূর্ণ হলেও হুট করে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এদের একটি নীতিমালার আওতায় এনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জরুরি।”

সারসংক্ষেপ

অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন উচ্ছেদে বারবার উদ্যোগ নিয়েও সফল না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে কেবল সুস্পষ্ট নীতিমালা, কারিগরি উন্নয়ন এবং কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে।

👉 প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এই সংকট সরাসরি পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। তাই সড়ক নিরাপত্তা ইস্যুতে সরকারের গতি ও বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে গুরুত্ব বাড়ছে।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version