প্রকাশিত: সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রবাস বুলেটিন
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪২ জন রোগী। চলতি বছরে এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির এ সংখ্যাই সর্বোচ্চ।
দেশজুড়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রবিবার প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ বছর এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৯০৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে—
- 
৪ জন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে,
 - 
২ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে,
 - 
১ জন ডিএনসিসি কোভিড-১৯ হাসপাতালে,
 - 
১ জন মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং
 - 
১ জন কক্সবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে মারা গেছেন।
 
মৃতদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী, বয়স ১৭ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে।
কোন বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৩২২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া—
- 
ঢাকা বিভাগে ১৯৮ জন,
 - 
ময়মনসিংহে ৪১ জন,
 - 
চট্টগ্রামে ১০৪ জন,
 - 
খুলনায় ৭২ জন,
 - 
রাজশাহীতে ৮২ জন,
 - 
রংপুরে ২৩ জন,
 - 
বরিশালে ১৯৫ জন এবং
 - 
সিলেটে ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
 
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৪৩৯ জন রোগী চিকিৎসাধীন, যার মধ্যে ৭৮৭ জন ঢাকায় ও ১ হাজার ৬৫২ জন ঢাকার বাইরে রয়েছেন।
ডেঙ্গুর বার্ষিক চিত্র: আক্রান্ত ও মৃত্যু বৃদ্ধি
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার গত বছরের তুলনায় বেশি।
- 
সেপ্টেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হন ১৫,৮৬৬ জন, মৃত্যু ৭৬ জনের।
 - 
অক্টোবরের প্রথম পাঁচ দিনে ভর্তি ২,৫৬৫ জন, মৃত্যু ১৪ জনের।
 - 
জুলাই মাসে ভর্তি ১০,৬৮৪ জন, মৃত্যু ৪১ জনের।
 
এছাড়া জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসেই রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ ও পরামর্শ
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের মধ্যে তরুণ ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, রোগীরা অনেকেই দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, ফলে শক সিনড্রোম তৈরি হচ্ছে—
যার ফলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে গিয়ে পেটে ও ফুসফুসে পানি জমে, রক্তক্ষরণ ও বোধশক্তি হ্রাস ঘটে।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, পরিচালক, আইইডিসিআর, বলেন—
“ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশার প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংস করা ও জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন—
“মশা নিধনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এই কাজের সমন্বয় না থাকায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। আমরা যত ব্যবস্থা নিই না কেন, জনগণ সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন।”
ডেঙ্গু প্রবণ জেলা
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছর ১০ জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ।
এর মধ্যে রয়েছে— বরগুনা, ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, গাজীপুর ও কুমিল্লা।
📌 জনসচেতনতা বার্তা:
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—
- 
ঘর-বাড়ির আশপাশে স্থির পানি জমতে না দেওয়া,
 - 
দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার,
 - 
জ্বর হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং
 - 
শিশু ও বয়স্কদের বিশেষভাবে সতর্ক রাখা।
 
									 
					