প্রকাশের তারিখ: সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে সারাদেশে টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার (১২ অক্টোবর) প্রথম দিনেই প্রায় ১০ লাখ শিশু টিকা পেয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী ১৮ কর্মদিবসে প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ইপিআই) ডা. মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, নিবন্ধিত তথ্য অনুযায়ী বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাত লাখের বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধনবিহীন শিশুর তথ্য রাতের মধ্যে সিস্টেমে যোগ করা হবে। তাঁর ধারণা, “প্রথম দিনেই ১০ লাখের বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আগামী দিনে টিকাদানের গতি আরও বাড়ানো হবে।”
সকালে রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,
“টাইফয়েডে এখনও অনেক শিশু মারা যায়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। সচেতনতা ও টিকাদানের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রতিটি শিশুর কাছে টিকা পৌঁছাতে পারলে টাইফয়েডে মৃত্যুহার প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে।”
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, “টাইফয়েড টিকাদান শুধু একটি স্বাস্থ্য প্রকল্প নয়, বরং এটি দেশের শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকারের এই উদ্যোগ দুর্বল জায়গায় বড় পরিবর্তন আনবে।”
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটিতে টিকাদান
সরকার জানিয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী এক ডোজ করে টাইফয়েড টিকা পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কার্যক্রম চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত, এরপর ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকা দেওয়া হবে। পথশিশুদের টিকাদানে সহায়তা করবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো।
ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, “৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সপ্তাহে পাঁচ দিন করে মোট ১৮ কর্মদিবসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান চলবে। শনিবারসহ অন্যান্য দিনে নিয়মিত ইপিআই কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।”
ডিএনসিসিতে প্রতিদিন ৭২ হাজার শিশুর টিকা প্রদান
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানিয়েছে, তাদের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৭২ হাজার শিশু টাইফয়েডের টিকা পাচ্ছে। গতকাল মোহাম্মদপুরের ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
ডিএনসিসি জানায়, ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯ শিশুকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ১৮১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাত লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ শিক্ষার্থী এবং ৬৫৬টি ইপিআই কেন্দ্রে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৯ শিশু টিকা পাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, জন্মনিবন্ধন না থাকা শিশুরাও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় টিকা নিতে পারবে। কার্যক্রম চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত।
									 
					