বুধবার, ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রকাশের তারিখ:
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন

সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পদ্মা নদীতে চলছে ইলিশ ধরা। ফরিদপুর ও রাজবাড়ী অংশে নদীর দুই পাড় জুড়ে এখন জেলেদের ব্যস্ততা—জাল ফেলছেন কেউ, কেউ আবার মাছ বিক্রিতে ব্যস্ত। দেখে বোঝার উপায় নেই, দেশে চলছে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা

জেলেরা বলছেন, প্রণোদনা না পাওয়া, ঋণের কিস্তির চাপ এবং সংসারের অভাব–অনটনের কারণে বাধ্য হয়েই তারা নদীতে নামছেন। অন্যদিকে, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ দাবি করছে, ইলিশ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে বহু জেলে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন।


🔹 “প্রণোদনা না পেয়ে বাধ্য হয়েছি নদীতে নামতে”

ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের জেলে সাইফুল্লাহ, রবিউল শেখ ও হিরামন দাসসহ আরও অনেকে জানান, সরকারি সহায়তা সব জেলেদের কাছে পৌঁছায়নি। এমনকি যাদের কার্ড রয়েছে, তাদের অনেকেই এখনো চাল পাননি।

সরকারি বরাদ্দে প্রতিজন জেলের জন্য ২৫ কেজি চালের কথা থাকলেও, বাস্তবে ২০ কেজির বেশি চাল কেউ পাননি বলে অভিযোগ করেন তারা।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলে বলেন,

“২৫ কেজি চাল দিয়ে পরিবার চালানো যায় না। আমরা অনেকেই জাল ও নৌকা মেরামতের জন্য এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। এখন আয় বন্ধ হয়ে গেছে, কিস্তি দিতে হচ্ছে—তাই নদীতে না নামলে উপায় নেই।”


🔹 প্রশাসনের অভিযান ও আইনি ব্যবস্থা

ফরিদপুরের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরদার বলেন,

“ইলিশ আহরণে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে, অসাধু মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে জেল ও জরিমানার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীতে ইলিশ শিকারের সঙ্গে যুক্ত জেলের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার ১২ জন, তবে এর বাইরেও অন্তত পাঁচ হাজারের বেশি জেলে জীবিকার জন্য নদীর ওপর নির্ভরশীল।

মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


🔹 “মাছও আর আগের মতো নেই”

জেলেদের ভাষায়, ঝুঁকি নিয়ে নদীতে গেলেও ইলিশসহ অন্যান্য মাছের প্রাচুর্য এখন অনেক কমে গেছে।
একজন জেলে বলেন,

“নদীতে এখন শুধু ইলিশ নয়, অন্য মাছও কমে গেছে। দিনের পর দিন জাল ফেলেও অনেক সময় কিছুই পাওয়া যায় না।”


🔹 মানবিক সহায়তার ঘাটতি

সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরদার জানান,

“ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সরকারি যে মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়, তা আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে কিছু এলাকায় বিতরণে সময় লাগছে।”


সমাপ্তি মন্তব্য:
পদ্মা নদীর তীরে চলছে নিষেধাজ্ঞা ও জীবিকার লড়াই—একদিকে প্রশাসনের অভিযান, অন্যদিকে জেলেদের অনাহার ও ঋণের বোঝা। সরকারের প্রণোদনা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও বিস্তৃতি না এলে ইলিশ রক্ষার উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।

Leave A Reply

বৈদেশিক কর্মসংস্থান, অভিবাস ও প্রবাস জীবন সংক্রান্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল।

যোগাযোগ

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্স (১১তম ফ্লো), রুম ১২/৮, ৬৭, নয়াপল্টন, ভিআইপি রোড, ঢাকা-১০০০, ফোন: +৮৮০ ১৫৩৩-১৯০৩৭১, ইমেইল: info@probashbulletin.com

Exit mobile version