আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২০ আগস্ট ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর একটি মূল শর্ত হিসেবে দনবাসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন তিনি।
পুতিনের শর্ত
বৈঠকের বিষয়ে অবগত একাধিক সূত্র জানায়, পুতিন ইউক্রেনের সেনাদের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি ইউক্রেনের অন্য অঞ্চলে সামরিক অভিযান বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করেছেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনের ৭৫ শতাংশ নাগরিকও এ ধরনের ছাড় দেওয়ার বিপক্ষে।
দনবাসের বর্তমান চিত্র
২০১৪ সাল থেকেই দনবাস দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে মস্কো। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা, গোপনে সেনা মোতায়েন এবং ২০২২ সালের বিশেষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে অঞ্চলটির বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নেয় রাশিয়া। বর্তমানে প্রায় ৮৮ শতাংশ দনবাস রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে। এর মধ্যে লুহানস্কের প্রায় পুরোটা ও দোনেৎস্কের চার ভাগের তিন ভাগ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। দোনেৎস্কে এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর ইউক্রেনের হাতে আছে, যেগুলো রক্ষায় হাজারো প্রাণহানি ঘটেছে।
কেন দনবাস গুরুত্বপূর্ণ
দনবাস পূর্ব ইউক্রেনের শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা, বিশেষ করে কয়লা ও ভারী শিল্পের জন্য পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে এ অঞ্চল। এখানকার রুশভাষী জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই মস্কো দাবি করে আসছে যে, তারা বৈষম্যের শিকার। ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার সময়ও ‘দনবাসের মানুষকে রক্ষা’ করার যুক্তিই সামনে এনেছিলেন পুতিন।
রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি
যুদ্ধ শুরুর আগে রুশ জনগণের বড় অংশ দনবাস রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে ছিলেন না। তবে আক্রমণের পর ক্রেমলিনের প্রচারণা এবং জাতীয়তাবাদী আবেগে এখন অধিকাংশ রুশ দনবাসকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে দেখতে চাইছেন।
দনবাসে সীমিত নাকি আরও বিস্তৃত পরিকল্পনা?
আলাস্কার বৈঠকে পুতিন শুধু দনবাস নয়, দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে সম্মুখসারি যুদ্ধ থামানোর কথাও বলেন। এর আগে তিনি প্রকাশ্যে চারটি অঞ্চল—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া—পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২২ সালের শরতে এ অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য গণভোটও আয়োজন করা হয়েছিল।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, দনবাস ছাড় দিলে রাশিয়া আরও ভেতরে অগ্রসর হতে পারে। ক্রেমলিনের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, “যুদ্ধ শুরুর সময় পুতিনের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না। একবার সাফল্যের স্বাদ পাওয়ার পর তাঁর লক্ষ্য আরও বিস্তৃত হয়েছে।”
সারসংক্ষেপ
পুতিনের শর্ত স্পষ্ট—দনবাস পুরোপুরি রাশিয়ার হাতে গেলে তবেই যুদ্ধ থামতে পারে। তবে কিয়েভ ও ইউক্রেনীয় জনগণ এতে রাজি নয়। ফলে শান্তি আলোচনার পথ আরও জটিল হয়ে উঠছে।