প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কে টালমাটাল হয়ে উঠেছে ভারতের অর্থনীতি। সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজারে এই আঘাতের প্রভাব পড়েছে দেশটির মুদ্রা ও শেয়ারবাজার উভয় খাতেই।
রুপির রেকর্ড পতন
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি নেমে গেছে প্রতি ডলারে ৮৮ দশমিক ১৬ রুপিতে, যা রেকর্ড সর্বনিম্ন। এর আগের দিন সোমবার এক পর্যায়ে রুপি আরও কমে দাঁড়ায় ৮৮ দশমিক ৩৩-এ, যদিও দিনের শেষে সামান্য ঘুরে ৮৮ দশমিক ১০-এ স্থির হয়।
ফরেক্স বিশেষজ্ঞদের মতে, ধারাবাহিক বৈদেশিক তহবিল প্রত্যাহার ও ডলারের চাহিদা বৃদ্ধিই রুপির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট
গত তিন সেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছেন।
সিআর ফরেক্স অ্যাডভাইজর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমিত পাবাড়ি বলেন, “এ ধরনের ব্যাপক বহিঃপ্রবাহ শুধু রুপিকে চাপে ফেলছে না, বরং স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ প্রবণতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপে ভারতের রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রুপির জন্য ৮৮ দশমিক ৫০ একটি বড় প্রতিরোধ সীমা, আর ৮৭ দশমিক ৫০ সমর্থন সীমা হতে পারে। তবে শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটতে না পারায় ঝুঁকি এখনো নিম্নমুখী রয়ে গেছে।
বিশ্ববাজারে ডলার ও তেলের দাম বৃদ্ধি
মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে ডলারের সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৮৪-তে। একই সময়ে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ০.৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৮ দশমিক ৪৫ ডলার।
শেয়ারবাজারে অস্থিরতা
ভারতের শেয়ারবাজারে দিনের শুরুতে কিছুটা উত্থান দেখা যায়। সেনসেক্স বেড়েছে ২০৭ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৫৭১ দশমিক ৯৪-এ। নিফটি সূচক বেড়েছে ৬০ দশমিক ৮ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৬৮৫ দশমিক ৮৫-এ।
তবে সোমবার বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ১ হাজার ৪২৯ কোটি রুপির শেয়ার বিক্রি করেছেন।
ট্রাম্পের দাবি
এদিকে সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তিনি এটিকে “অনেক দেরিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত” বলে উল্লেখ করেছেন।
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশালে ট্রাম্প লেখেন, “ওরা এখন শুল্ক শূন্যে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সময় ফুরিয়ে আসছে। অনেক বছর আগেই এটা করা উচিত ছিল। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এতদিন ধরে ‘একতরফা বিপর্যয়’ ছাড়া কিছুই নয়।”
👉 অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে ভারতের মুদ্রা ও রপ্তানি খাত আরও বড় ধরনের সংকটে পড়তে পারে।