প্রকাশিত: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর শুরুতে ভারতের ক্ষমতাসীন মহল স্বস্তি পেলেও অচিরেই সম্পর্কের ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘কিং ডোনাল্ড’-কে খুশি করতে নানা উদ্যোগ নিলেও ট্রাম্পের কঠোর বাণিজ্যনীতি ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
শুল্ক নিয়ে সঙ্কট
-
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
-
শিগগিরই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তা দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়।
-
যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি—ভারত রাশিয়ার সস্তা তেল কিনে শোধন করে ইউরোপে রপ্তানি করছে।
-
এ শুল্ক ভারতের সব অ-মুক্তপণ্যের (নন-এক্সেম্পট) রপ্তানি কার্যত অপ্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে।
কূটনৈতিক টানাপোড়েন
-
কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের স্বল্পমেয়াদি সংঘাতে ট্রাম্প প্রকাশ্যে দাবি করেন, তাঁর হুমকিতেই যুদ্ধ থেমে গেছে।
-
এতে ভারত ও পাকিস্তানকে একই কাতারে “ঝামেলাবাজ প্রতিবেশী” হিসেবে দেখানো হয়, যা ভারতের জন্য কূটনৈতিকভাবে বড় অপমান।
-
ট্রাম্প ভারতকে “মৃত অর্থনীতি” বলে উপহাস করেছেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধকে “মোদির যুদ্ধ” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
অনেকের মতে, বাড়তি শুল্ক আরোপ আসলে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্ত। ভারত ট্রাম্পকে “শান্তির নায়ক” হিসেবে কৃতিত্ব দিতে রাজি হয়নি, ফলে তিনি মোদির ওপর খেপে গিয়ে বাণিজ্যিক আঘাত হেনেছেন।
কৌশলগত বাস্তবতা
-
ঐতিহাসিকভাবে ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি (Non-Alignment) মেনে এসেছে।
-
মোদির আমলে তা “কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন” (Strategic Autonomy) নামে পরিচিত।
-
রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে ইউরোপে রপ্তানির মতো ভারসাম্য নীতি ভারতের সক্ষমতা দেখালেও, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠছে।
ভূরাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা
-
ভারতের অর্থনীতি বড় হলেও এখনো পশ্চিমা ভিআইপি ক্লাবের স্থায়ী সদস্য হওয়ার মতো শক্তি অর্জন করেনি।
-
পশ্চিমা দুনিয়া ভারতকে মিত্র নয়, বরং ক্লায়েন্ট বা নির্ভরশীল দেশ হিসেবেই দেখে—এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা।
-
ইউরোপ ট্রাম্পের নীতি অনুসরণে বাধ্য হওয়ায় ভারতের জন্য কৌশলগত পথচলা আরও কঠিন হচ্ছে।
উপসংহার
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের সামনে এখন দ্বৈত চ্যালেঞ্জ—একদিকে চীনের উত্থান, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষাবাদী নীতি। মোদিকে বৈরী বিশ্বে ভারসাম্য রক্ষার দড়ির ওপর হেঁটে চলতে হবে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই হবে ঝুঁকিপূর্ণ।