প্রকাশের তারিখ:
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রবাস বুলেটিন
দক্ষিণ এশিয়ায় আবারও বাড়ছে যুদ্ধের উত্তেজনা। আফগানিস্তানের সীমান্তে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান ও আফগান প্রতিশোধমূলক হামলায় দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আগুন জ্বলছে। ইতিহাস যেন নিজের পুনরাবৃত্তি করছে—একই রক্তক্ষয়ী অধ্যায়, কেবল অভিনেতা বদলেছে।
গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানের বিমান আফগান ভূখণ্ডের গভীরে ঢুকে একাধিক হামলা চালায়। এর জবাবে তালেবান বাহিনী সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি চৌকিগুলোতে পাল্টা আক্রমণ চালায়। সীমান্ত অঞ্চলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনাও বেড়ে চলছে। কাবুল ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে “সরাসরি আগ্রাসন” অভিযোগ তুলেছে, অপরদিকে পাকিস্তান দাবি করছে—“সন্ত্রাসীদের ঘাঁটির বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক অভিযান” চালানো হচ্ছে।
🔹 সাবেক মিত্র থেকে শত্রু
বিশ্লেষকদের মতে, এটি এক সময়ের সহযোগী দুই শক্তির সম্পর্ক ভাঙনের পরিণতি। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় বেড়ে ওঠা তালেবান এখন ইসলামাবাদের প্রধান নিরাপত্তা হুমকি। একদা যে জেনারেলরা তালেবানকে প্রশিক্ষণ, অর্থ ও অস্ত্র দিয়েছিলেন, আজ তাঁরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন।
আইন ও বৈশ্বিক রাজনীতি বিষয়ক বিশ্লেষক জুনাইদ এস আহমদ লিখেছেন—
“পাকিস্তানের জেনারেলরা ভেবেছিলেন তাঁরা তালেবানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে সেই শক্তিই এখন তাঁদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। শিকারি হয়ে গেছে শিকার।”
🔹 পুরোনো সাম্রাজ্যের নতুন চিত্রনাট্য
জুনাইদ আহমদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বর্তমান সংঘাতের শেকড় নিহিত ১৯৮০-এর দশকের স্নায়ুযুদ্ধকালীন রাজনীতিতে। তখন ওয়াশিংটন, ইসলামাবাদ ও রিয়াদ মিলে সোভিয়েতবিরোধী জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল। সেই জঙ্গি অবকাঠামোই আজ নতুন রূপে পাকিস্তানকে আঘাত করছে।
২০২২ সালে ইমরান খানের পতনের পর থেকে পাকিস্তান ফের সামরিক অভ্যুত্থানের ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্লেষকের ভাষায়—
“ইমরান খান ওয়াশিংটনের অবাধ্য হয়ে উঠেছিলেন। মার্কিন ঘাঁটির অনুমতি না দেওয়া এবং সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়াই ছিল তাঁর ‘অপরাধ’। ফলশ্রুতিতে তাঁকে সরানো হয় সাংবিধানিক নাটকের মাধ্যমে।”
🔹 অভ্যন্তরীণ সংকট ঢাকতে সীমান্তযুদ্ধ
পাকিস্তানের জেনারেলরা এখন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ইমরানপন্থী জনরোষ থেকে মনোযোগ সরাতে সীমান্ত উত্তেজনাকে ব্যবহার করছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা।
খাইবার পাখতুনখাওয়া ও উপজাতি এলাকায় বিমান হামলার নামে চলছে পশতুন জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন। এতে অসন্তোষ আরও গভীর হচ্ছে, তৈরি হচ্ছে নতুন বিদ্রোহের বীজ।
“প্রতিটি ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান নতুন বিদ্রোহের জন্ম দিচ্ছে,” — বলেন জুনাইদ আহমদ।
“আফগানিস্তান সব সময় সাম্রাজ্যের কবরস্থান হিসেবে পরিচিত। এবার সেখানে কার কবর রচিত হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।”
🔹 বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নতুন ভারসাম্য
ওয়াশিংটন আবারও পাকিস্তানকে কৌশলগত দাবার বোর্ডে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে, ভারত ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও নতুন টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।
জুনাইদ আহমদের ভাষায়—
“ওয়াশিংটন একদিকে পাকিস্তানের সেনাশাসিত অভিজাতদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, অন্যদিকে ভারত ও ইসরায়েলের সঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবাদের অক্ষ গড়ে তুলছে। এই দ্বিচারিতা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।”
🔹 উপসংহার
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে যে যুদ্ধ আবারও জ্বলে উঠেছে, তা শুধু দুটি রাষ্ট্রের লড়াই নয়—বরং চার দশকের পুরোনো সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতির প্রতিধ্বনি। অভ্যন্তরীণ সংকট, সামরিক প্রভাব আর আন্তর্জাতিক কৌশলের এই মিশ্রণে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি আবারও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
সূত্র: মিডলইস্ট মনিটর |
									 
					