প্রকাশিত: শনিবার, ৩০ আগস্ট ২০২৫
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও গণ অধিকার পরিষদের নেতা–কর্মীদের মধ্যে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
ঘটনাপ্রবাহ
-
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে গণ অধিকার পরিষদের একটি মিছিল কাকরাইলে জাপা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
-
মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। সংঘর্ষে উভয় দলের বহু কর্মী আহত হন।
-
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে পুলিশ এবং পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
উভয় দলের দাবি–অভিযোগ
-
গণ অধিকার পরিষদের অভিযোগ, তাঁদের মিছিলে জাপার কর্মীরা হামলা চালান।
-
অপরদিকে জাপার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গণ অধিকার পরিষদের কর্মীরাই প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
-
জাপার মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “গণ অধিকার পরিষদ জাপাকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাতে সভা করেছে এবং পরবর্তীতে জাপার কার্যালয়ের সামনে উসকানি দিয়েছে।” তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পরিদর্শক আনিসুর রহমানকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, সংঘর্ষের সময় কিছু নেতা–কর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও আক্রমণ চালান। এতে সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্য আহত হন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার সব ধরনের “মব ভায়োলেন্স” মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।
নুরুল হক নুরের অবস্থা
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে ঢামেক হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, “চিকিৎসকদের মতে নুরুল হকের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাঁর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “এই হামলার পেছনে কার নির্দেশনা ছিল, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানকে স্পষ্ট করতে হবে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
-
নুরুল হক নুরের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন।
-
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাতে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে।
-
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ঢামেকে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা প্রকাশ করেন।
সার্বিক পরিস্থিতি
ঘটনার ফলে কাকরাইল, বিজয়নগর ও নয়াপল্টন এলাকায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল ব্যাহত হয়। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয় এবং আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।