প্রকাশের তারিখ:
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গ নিয়ে এবার কড়া বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, “যারা শহিদদের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে দায়িত্বে আছে, তারা যদি দায়সারা দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে চায় — তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই।”
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
🔹 “মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই”
সারজিস আলম বলেন,
“কিছু উপদেষ্টাকে দেখা যাচ্ছে তারা কেবল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে চায়— দেশে থাকুক বা দেশের বাইরে। এই দায়সারা দায়িত্ব অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারকে দুর্বল করে। শহিদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যারা এমনটা করবে, তারা দেশের মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ধরবেই।”
🔹 নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রতীক নিয়ে বক্তব্য
এনসিপি নেতা জানান, দলটি শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
“শাপলা প্রতীকে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও কখনো স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করছে, না হলে কারো চাপে পড়েছে। এটি জনগণ মেনে নেবে না।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও স্বচ্ছ অবস্থান ধরে রাখবে।
🔹 জোট গঠন নিয়ে ইঙ্গিত
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম বলেন,
“কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া হবে, সে আলোচনা চলছে। যখন বহু রাজনৈতিক দল একই পথে হাঁটবে, তখন জনগণের স্বার্থে একত্রিত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এনসিপি এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।”
🔹 আওয়ামী লীগ নিয়ে মন্তব্য
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন,
“আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন এই অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক নয়। বাংলাদেশের ভালো মানুষরা চাইলে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে, এতে এনসিপির কোনো আপত্তি নেই।”
🔹 নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা
সারজিস আলম অভিযোগ করেন,
“নির্বাচন কমিশন ‘জাতীয় লীগ’ নামে একটি দলকে নিবন্ধন দিতে মরিয়া। অথচ তাদের কোনো সংগঠন কাঠামোই নেই, টয়লেটের পাশে ছোট্ট একটি ঘর ছাড়া কিছুই নেই। সুতরাং রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করতে হবে।”
🔹 তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন,
“তিনি যে ভাইকে দেশে রেখে এসেছিলেন, সেই ভাইকে দেশে গিয়ে দেখতে পারেন না; যে ঘরে স্মৃতি, সেটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে; যে মাকে সুস্থ দেখে গিয়েছিলেন, তাকে অসুস্থ করে নির্যাতন করা হয়েছে— এসব কথার সঙ্গে আমাদের গভীর সহমর্মিতা আছে।”
তিনি আরও বলেন,
“এ ধরনের নির্যাতন শুধু তারেক রহমানের ক্ষেত্রেই নয়, হাজারো নেতাকর্মীর ওপর ঘটেছে। আমরা চাই, এসব অপরাধের বিচার হোক এবং যেন ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।”
🔹 বিএনপির প্রতি আহ্বান
সারজিস আলম বিএনপির উদ্দেশে বলেন,
“আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা যেন কোনো অর্থ বা সুবিধার বিনিময়ে স্থানীয় পর্যায়ে আশ্রয় না পায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃত্বকে এ বিষয়ে কঠোর থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি আবার ফিরে আসে, যারা তাদের সহযোগিতা করেছে, কেউই রেহাই পাবে না।”
🔹 সভায় উপস্থিত ছিলেন
সমন্বয় সভায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন, এবং জেলা–উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপসংহার:
“সেফ এক্সিট” ইস্যুকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক মহলে চলছে উত্তপ্ত আলোচনা। আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পোস্টের পর এবার সারজিস আলমের এই বক্তব্যে সেই বিতর্ক আরও একধাপ তীব্র হলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সূত্র:
এনসিপির সমন্বয় সভা, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ, মাঠ-প্রতিবেদন
									 
					