প্রকাশের তারিখ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন ডেস্ক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় প্রশাসন ও সরকারি বিতর্কিত কর্মকর্তারা যেন কোনোভাবেই যুক্ত না হতে পারেন, সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান আবদুল মঈন খান।
প্রশাসনকে ‘দলীয় অনুগত কাঠামো’ থেকে বের করতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অনুগত কাঠামোয় রূপ দেওয়া হয়েছে। এর ফলেই গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা প্রহসনের শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন,
“কমিশনকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যাতে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত না হতে পারেন। কমিশন যেন এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হয়।”
তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, প্রশাসনের সবাইকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
“অতীতের সব কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা বাস্তবসম্মত নয়; বরং যারা অতীতে চাপ বা ভয়ে অন্যায় করেছে, তাদের এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে,” বলেন মঈন খান।
‘আমাদের লক্ষ্য জাতীয় স্বার্থ রক্ষা’
আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপির লক্ষ্য কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা।
“১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আমরা চাই—১৮ কোটি মানুষ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং ১২ কোটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”
‘নির্বাচন কমিশনকে উদাহরণ স্থাপন করতে হবে’
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে একটি উদাহরণ স্থাপন করতে হবে, যাতে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে—বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।
“একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত, তবু প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও ৩ লাখ বুথে ভোট পরিচালনা করতে হলে প্রায় ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই জনবল আসে প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে—তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।”
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
আবদুল মঈন খান বলেন, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে, যাতে জনগণ বিশ্বাস করে যে তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই।
“যদি সরকার ও কমিশন দৃশ্যমানভাবে নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে।”
নির্বাচনী সংস্কারের প্রস্তাব
তিনি আরও জানান, বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচনী সংস্কারসংক্রান্ত প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। কমিশন যদি সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়ন করে, তাহলে আসন্ন নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক হবে।
শেষে আবদুল মঈন খান বলেন,
“আমরা চাই, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যাতে বিশ্ব বুঝতে পারে—বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।”
বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
									 
					