প্রকাশের তারিখ: সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার | প্রবাস বুলেটিন
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি ফেনী–১, বগুড়া–৭ এবং দিনাজপুর–৩ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন। একইসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া–৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সোমবার বিকেলে রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩৭টি আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
🔹 খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রার্থীতা নিশ্চিত
দলীয় সূত্র জানায়, অসুস্থতা ও দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের জন–অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁকে নির্বাচনের নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা দেয়।
অন্যদিকে, তারেক রহমানের বগুড়া–৬ আসনে প্রার্থী হওয়া আগেই নিশ্চিত ছিল।
🔹 স্থায়ী কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণ
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—
-
খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা–১)
-
মির্জা আব্বাস (ঢাকা–৮)
-
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা–৩)
-
আবদুল মঈন খান (নরসিংদী–২)
-
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম–১০)
-
সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার–১)
-
হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা–৩)
-
এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর–১)
তবে স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচনে নেই। জমির উদ্দিন সরকারের আসন পঞ্চগড়–১ থেকে প্রার্থী হয়েছেন তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমির।
🔹 প্রার্থী তালিকা ও জোট রাজনীতি
৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি সোমবার ২৩৭ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। বাকি ৬৩টি আসন জোট ও সমমনা দলের জন্য রাখা হয়েছে।
বিশেষ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণতন্ত্র মঞ্চ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বিজেপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার আলোচনাও চলছে।
ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও ৭টি আসন আপাতত ফাঁকা রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব আসনে জোটভিত্তিক সমঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে।
🔹 প্রবাসী ও নারী প্রার্থী
ঘোষিত তালিকায় দশজন নারী প্রার্থী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম খালেদা জিয়া নিজেই।
অন্যদের মধ্যে আছেন—
তাহসিনা রুশদীর (সিলেট–২), শামা ওবায়েদ ইসলাম (ফরিদপুর–২), আফরোজা খান রিতা (মানিকগঞ্জ–৩), ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো (ঝালকাঠি–২), সানজিদা ইসলাম তুলি (ঢাকা–১৪) প্রমুখ।
এছাড়া সিলেট বিভাগ থেকে তিনজন প্রবাসী প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন— এম এ মালিক, মোহাম্মদ কয়সর আহমেদ ও সওকত হোসেন।
🔹 মনোনয়ন–বঞ্চিতদের ক্ষোভ
মাদারীপুর–১ আসনে কামাল জামান মোল্লাকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর রাতেই মনোনয়ন–বঞ্চিত নেতা সাজ্জাদ হোসেন লাভলুর সমর্থকেরা ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন। একইভাবে চট্টগ্রাম–৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আসলাম চৌধুরীকে বাদ দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরাও মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন।
🔹 রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্র মনে করছে, খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ আসন্ন ভোটকে রাজনৈতিকভাবে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করবে। এতে দলীয় কর্মীদের মনোবল যেমন বাড়বে, তেমনি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন জটিলতা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় নেতৃত্ব পাওয়া যাবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,
“বাংলাদেশের মানুষ বহু বছর পর ভোট দিতে উৎসাহিত হচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে সেই ভোটের উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।”
সমাপ্তি নোট:
আগামী ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপির এই প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে মূলত দলটি নির্বাচনী ময়দানে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করল।
