প্রকাশিত: ঢাকা, মঙ্গলবার
বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে নির্বাচনের মাস ঘোষণা করা হলেও সময় গড়াতেই তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণায় এখনো অবস্থান একই—২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে জাতীয় নির্বাচন হবে এবং তফসিল ঘোষণা হবে এ বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর শর্ত ও ভিন্নমুখী অবস্থান ভোটের অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে তুলছে।
বিএনপি সমর্থনে, অন্যরা শর্তযুক্ত
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর বিএনপি তা স্বাগত জানিয়েছিল। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এটি রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করবে এবং গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সুগম করবে। বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট—তারা ফেব্রুয়ারি নির্বাচন মেনে নিতে প্রস্তুত।
কিন্তু জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।
-
জামায়াত নির্বাচনের সময়সূচি মেনে নিলেও সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির দাবি অব্যাহত রেখেছে।
-
এনসিপি আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে বলছে, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।” দলটি সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে অনড়।
-
ইসলামী আন্দোলনও পিআর পদ্ধতির দাবিতে আপসহীন। তাদের মতে, পিআর ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না।
শর্তের রাজনীতি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি চাইছে দ্রুত নির্বাচন। তাদের ধারণা, সময় যত কমবে, নির্বাচনের ফলাফল তত তাদের অনুকূলে যাবে। অন্যদিকে এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের কড়াকড়ি শর্ত ঘোষিত সময়সূচিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। জামায়াত তুলনামূলক মাঝারি অবস্থানে থাকলেও তারা অভিযোগ করছে যে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা
রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ঘোষিত ফেব্রুয়ারি নির্বাচন পিছিয়ে গেলে বা বাতিল হলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ এতে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ থমকে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তাই দলীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে নির্বাচনকে জাতীয় স্বার্থ হিসেবে দেখতে হবে।
বিভ্রান্তির সুযোগ নিচ্ছে পরাজিত শক্তি
এ সময় দেশের ভেতরে-বাইরে পতিত রাজনৈতিক শক্তিগুলোও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা সেখানে বসেই দলের কৌশল সাজাচ্ছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা যত বাড়বে, ততই এ ধরনের শক্তির পুনরুত্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পার করেছে। তার মূল লক্ষ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঘোষিত সময়সূচি থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন অনিশ্চিত হলে তা জাতীয় সংকটে পরিণত হবে।
👉 সারকথা: ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আশাবাদী হলেও এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের শর্ত, জামায়াতের সংশয়—সবকিছু মিলিয়ে জনমনে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো কি নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারবে?