বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ও ইভ টিজিং একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এ সংক্রান্ত বেশ কিছু কঠোর আইন বিদ্যমান। রাস্তাঘাটে, জনসমাগমস্থলে বা উৎসবে কোনো নারী হয়রানির শিকার হলে সেটি আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় অপরাধ।
সম্প্রতি ঢাকার লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে সিগারেট খাওয়া নিয়ে দুই নারীকে লাঞ্ছিত করা এবং মাগুরায় আট বছরের এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ দেখা গেছে। যদিও বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইন রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পেতে ব্যর্থ হন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০
এই আইনের আওতায় নারীর শ্লীলতাহানি ও যৌন পীড়নের শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ বছর এবং ন্যূনতম ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। একইসঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির অর্থদণ্ডও হতে পারে।
দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি
- যদি কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে অশ্লীল আচরণ করে বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে, তবে তিনি ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
- যদি কোনো ব্যক্তি নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কোনো কাজ করে, তাহলে তাকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ
এই আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি রাস্তায় বা পাবলিক প্লেসে কোনো নারীকে অপমান বা বিরক্ত করে বা তার পথরোধ করে, তবে তাকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতে পারে। এছাড়াও, যদি কেউ সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, তাহলে তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা করা হতে পারে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত ও তাৎক্ষণিক শাস্তি
ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন অনুযায়ী, যদি কোনো অপরাধ হাতেনাতে ধরা পড়ে, তবে ম্যাজিস্ট্রেট সরাসরি শাস্তি দিতে পারেন। এই আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।
আইনি প্রতিকার পাওয়ার উপায়
১. থানায় অভিযোগ দাখিল: ইভ টিজিং বা যৌন হয়রানির শিকার হলে নিকটস্থ থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করা যেতে পারে। ২. পুলিশের উদ্যোগ: পুলিশ নিজে বাদী হয়েও মামলা করতে পারে। ৩. আদালতের শরণাপন্ন হওয়া: থানায় অভিযোগ না নিলে সরাসরি আদালতে মামলা করা যেতে পারে। ৪. ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তা: যদি কোনো অপরাধ চলাকালীন ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি থাকে, তবে ঘটনাস্থলেই শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।
আইনজীবীরা মনে করেন, দেশের প্রচলিত আইন যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সংজ্ঞার ভুল ব্যাখ্যার কারণে ভুক্তভোগীরা অনেক সময় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। তাই, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।