বাংলাদেশ, একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। বিশেষত, দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলগুলোর ভূমি-স্তরের পরিবর্তন এবং ভারতীয় প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ইতিহাসে বড় ধরনের কোন ঘটনা হয়নি, তবে আশেপাশের দেশ যেমন ভারতের উত্তর-পূর্ব, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশও একটি বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশ কয়েকটি কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে:
-
ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষ: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল ভারতীয় এবং ইন্ডো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেটের সংলগ্ন। এই প্লেটগুলোর সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটতে পারে।
-
প্রাকৃতিক ভূমিকম্প প্রকৃতির পরিবর্তন: বাংলাদেশের ভূ-গঠন কিছুটা তরল, ফলে ভূমিকম্পের ঘটনা দেশের মধ্যে বিস্তৃত হতে পারে।
-
নগরায়ন এবং জনবহুল এলাকা: ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বড় শহরের জনবসতি ও অস্থিতিশীল ভবন নির্মাণও ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
করণীয় কী?
ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন:
-
ভূমিকম্প প্রতিরোধী স্থাপত্য নকশা:
-
ভবনগুলিকে ভূমিকম্প সহনশীলভাবে নির্মাণ করা উচিত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমানোর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা দরকার।
-
-
জনসচেতনতা বৃদ্ধি:
-
স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমিকম্পের বিষয়ে নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম আয়োজন করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে কীভাবে ভূমিকম্পের সময় নিজেদের সুরক্ষিত রাখা যায়।
-
-
ভূমিকম্পের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা:
-
সিভিল ডিফেন্স এবং স্থানীয় প্রশাসন ভূমিকম্পের আগে, পরে এবং তার সময়ে কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশেষ সতর্কতা ও ভূমিকম্পে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকতে হবে।
-
-
তৈরি করা জরুরি প্রস্তুতি পরিকল্পনা:
-
পরিবার, স্কুল এবং অফিসগুলোকে জরুরি প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষিত করতে হবে। ভূমিকম্পের পর জরুরি সেবা ব্যবস্থা যেমন উদ্ধার কার্যক্রম, চিকিৎসা সেবা, খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি স্থাপন করা দরকার।
-
-
প্রযুক্তি ব্যবহার:
-
ভূমিকম্প শনাক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও ভূমিকম্পের সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে।
-
-
উন্নত ভবন ব্যবস্থাপনা:
-
পুরনো ও অব্যবহৃত ভবনগুলোকে ভূমিকম্প সহনশীলভাবে সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি, নতুন ভবন নির্মাণে বিশেষ নজর দিতে হবে, যাতে ভূমিকম্পের সময় তারা নিরাপদ থাকে।
-
ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাংলাদেশে একটি বাস্তব সমস্যা। তবে, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির মাধ্যমে এই ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব। সবার সচেতনতা, সঠিক নির্মাণ, এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে তৈরি করা সম্ভব হবে।