গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় পুনরায় আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয় গভীর হয়ে উঠেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৩৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, এবং গত ১৭ মাসের সামরিক হামলায় অন্তত ৫০ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৮ জন।
ফিলিস্তিনের ফুটবল বিষয়ক আইনগত সমস্যা অবশ্য নতুন নয়। ২০২৩ সালের মে মাসে ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার কাছে ইসরায়েলি ফুটবল ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল, কারণ অনেক ক্লাব ইসরায়েলের অবৈধ দখলদার অঞ্চলে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা ফিফার নিয়মের পরিপন্থী। এর আগে ২০১৭ সালে একই দাবি উঠেছিল, কিন্তু ফিফা সেসময় জানিয়েছিল, তারা রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকবে।
এ বিষয়ে স্কটিশ লেখক কোল ম্যাককাইল ‘মিডল ইস্ট আই’ ওয়েবসাইটে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি ফিফার দ্বৈতনীতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি আর্জেন্টিনায় ১৯৭৮ বিশ্বকাপ আয়োজনের সময়ে সামরিক জান্তার ক্যু ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে ফিফার উদাসীনতার উদাহরণ হিসেবে দেখান। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে দ্রুত বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করলেও, ফিফা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ইসরায়েলের হামলায় গাজার ফুটবল অবকাঠামোও ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ফুটবল স্টেডিয়ামসহ অন্যান্য ক্রীড়া স্থাপনা ধ্বংসের শিকার হয়েছে। ইয়ারমুক স্পোর্টস অ্যারেনার মতো একসময় বিখ্যাত স্টেডিয়ামটি আজ শুধুই স্মৃতি। ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে বন্দিদের নির্যাতন করেছে এবং এই স্থানকে ব্যবহার করেছে আটক আটক করার কেন্দ্র হিসেবে।
ফিফার নির্বিকার ভূমিকা ফিলিস্তিনের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফিলিস্তিন জাতীয় ফুটবল দল প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার জন্য কোয়ালিফাই করেছে। এটাই প্রমাণ করে, ফুটবল বিশ্বে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ঐক্য।
গত মাসে সেল্টিক ফুটবল ক্লাবের সমর্থকেরা ‘ইসরায়েলকে লাল কার্ড দেখাও’ প্রচারণা শুরু করেন, যা একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সমর্থকেরা এই প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন, এভাবে ফুটবল বিশ্বের প্রতি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা হচ্ছে।
ফিফার দ্বৈতনীতি, যেখানে ফুটবল কখনও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে না, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি তাদের উদাসীনতা, আন্তর্জাতিক ফুটবলে একটি বড় প্রশ্ন চিহ্ন সৃষ্টি করছে। ফুটবল শুধুমাত্র খেলা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী শান্তি এবং মানবাধিকারের পক্ষে শক্তিশালী একটি মাধ্যম হতে পারে, তবে ফিফার মত প্রতিষ্ঠান যদি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক স্বার্থের দিকে মনোযোগ দেয়, তাহলে এই ধরনের অবস্থা আরও গভীর হতে থাকবে।
ফিলিস্তিনের জন্য এটা শুধুমাত্র একটি খেলার লড়াই নয়, এটি একটি জাতির সম্মান এবং মুক্তির সংগ্রাম।