চীনের আশাব্যঞ্জক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও আকরিক লোহার বাজারে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ এবং চীনের প্রণোদনার অনিশ্চয়তা বুধবার আকরিক লোহার আন্তর্জাতিক মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
চীনের দালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (ডিসিই) সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া সেপ্টেম্বর মাসের আকরিক লোহার চুক্তির মূল্য ০.৯২ শতাংশ হ্রাস পেয়ে প্রতি মেট্রিক টনে ৭০২.৫ ইউয়ানে দাঁড়ায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১১,৬২৬.৩৮ টাকা (প্রতি ইউয়ান ১৬.৫৫ টাকা হিসাবে)। অন্যদিকে, সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জে মে মাসের বেঞ্চমার্ক আকরিক লোহার দাম ১.৭৩ শতাংশ কমে ৯৭ মার্কিন ডলারে নেমে আসে।
অর্থনৈতিক বৃদ্ধি প্রত্যাশা ছাড়ালেও বাজারে অনিশ্চয়তা
চীন ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৫.৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা এই বৃদ্ধির পেছনে ভোক্তা খাতের চাঙা অবস্থা ও শিল্প উৎপাদনের উন্নতিকে দায়ী করছেন। মার্চ মাসে নতুন বাড়ির দামে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে, যা ফেব্রুয়ারির ০.১ শতাংশ পতনের পর কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিয়েছে।
তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই শক্তিশালী অর্থনৈতিক তথ্য সত্ত্বেও আকরিক লোহার দামে পতন চীনের প্রণোদনা নীতির অনিশ্চয়তা ও মার্কিন শুল্কের শঙ্কাকেই প্রতিফলিত করে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, চীন হয়তো এখনই বড় ধরনের আর্থিক প্রণোদনা দেবে না।
সাপ্লাই সংকোচন ও চাহিদার ভারসাম্য
বিশ্ববাজারে আকরিক লোহার সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। রিও টিন্টো জানিয়েছে, তারা ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণ লোহা আকরিক সরবরাহ করেছে। একই সঙ্গে, ভ্যালি জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন ৪.৫ শতাংশ কমে ৬৭.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, চীনের কাঁচা ইস্পাত উৎপাদন মার্চে ৪.৬ শতাংশ বেড়েছে, যা উচ্চ মার্জিন ও রপ্তানিমুখী বাজারের কারণে হয়েছে বলে জানানো হয়। ফলে সরবরাহ কমলেও চাহিদা এখনো শক্তিশালী রয়ে গেছে।
অন্যান্য স্টিল উপাদানের মিশ্র প্রবণতা
ডিসিইতে কোকিং কয়লার দাম ০.৬৬ শতাংশ কমেছে, যদিও কোকের দাম ০.১৩ শতাংশ বেড়েছে।
শাংহাই ফিউচার্স এক্সচেঞ্জে বিভিন্ন স্টিল পণ্যের মূল্য নিম্নমুখী ছিল:
-
রিবার: ১.১৫% হ্রাস
-
হট-রোলড কয়েল: ১.১৭% হ্রাস
-
ওয়ার রড: ০.৫৭% হ্রাস
-
স্টেইনলেস স্টীল: ০.০৮% হ্রাস
বিশ্লেষকদের মতে, এই মিশ্র প্রবণতা আন্তর্জাতিক ইস্পাত শিল্প এবং আকরিক লোহার সাপ্লাই চেইনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ভবিষ্যতে মার্কিন শুল্ক নীতি ও চীনের অর্থনৈতিক পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে বাজারের পরবর্তী দিকনির্দেশনা।