ঢাকা, ৩ মে ২০২৫ (প্রবাস বুলেটিন):
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ‘গোয়েন্দা তথ্য’ পেয়েছে যে, ভারত অল্প সময়ের মধ্যে সামরিক অভিযান চালাতে পারে।
এই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতের মতো এবারও পরিস্থিতি দ্রুত যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে, কারণ এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ইতোমধ্যে অনেকটাই ছিন্ন হয়েছে।
সামরিক শক্তির তুলনা: ভারত বনাম পাকিস্তান
লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (IISS) এবং বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের সামরিক শক্তির মধ্যে ভারসাম্য কিছুটা ভারতের পক্ষে।
সেনা সংখ্যা
-
ভারত: প্রায় ১৪ লাখ সক্রিয় সদস্য (সেনাবাহিনী ১২.৩৭ লাখ, নৌবাহিনী ৭৫,৫০০, বিমানবাহিনী ১.৪৯ লাখ, কোস্ট গার্ড ১৩,৩৫০)।
-
পাকিস্তান: প্রায় ৭ লাখ (সেনা ৫.৬ লাখ, বিমানবাহিনী ৭০,০০০, নৌবাহিনী ৩০,০০০)।
স্থল শক্তি
-
ভারত: কামান ৯,৭৪৩টি, ট্যাংক ৩,৭৪০টি।
-
পাকিস্তান: কামান ৪,৬১৯টি, ট্যাংক ২,৫৩৭টি।
আকাশ শক্তি
-
ভারত: যুদ্ধবিমান ৭৩০টি।
-
পাকিস্তান: যুদ্ধবিমান ৪৫২টি।
নৌ শক্তি
-
ভারত: ১৬টি সাবমেরিন, ১১টি ডেস্ট্রয়ার, ১৬টি যুদ্ধজাহাজ এবং ২টি বিমানবাহী রণতরী।
-
পাকিস্তান: ৮টি সাবমেরিন ও ১০টি যুদ্ধজাহাজ।
পারমাণবিক অস্ত্র
-
ভারত: আনুমানিক ১৭২টি।
-
পাকিস্তান: আনুমানিক ১৭০টি।
পটভূমি: কাশ্মীর ঘিরে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন প্রাণ হারান। এই হামলার দায়ভার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করা, নাগরিক বহিষ্কার এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে গত সাত দশকে ভারত ও পাকিস্তান চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে, যার তিনটি ছিল কাশ্মীর নিয়ে। প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৯৪৭ সালে, যা শেষ হয় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারিতে এক চুক্তির মাধ্যমে। এরপর থেকেই কাশ্মীর অঞ্চলটি দুই দেশ আলাদা করে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, কিন্তু বিরোধ এখনো অবসান হয়নি।
উপসংহার
বর্তমানে পরিস্থিতি এমন এক মোড় নিয়েছে, যেখানে সামান্য উসকানিই বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই উত্তেজনা কমাতে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে।