ঢাকা, ১১ মে ২০২৫:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে ‘ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল’ হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার এবং দলটির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘সঠিক’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। রোববার বিকালে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমরা আনন্দিত যে, বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসীবাদী সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
পুরনো দাবির প্রতিফলন
বিএনপি জানায়, তারা বহু আগেই এসব দাবি সরকারের সামনে তুলে ধরেছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত’ আওয়ামী লীগের বিচার এবং আইনি প্রক্রিয়ায় দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মির্জা ফখরুল জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া দুটি পৃথক পত্রে এই দাবিগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম যে আইনি প্রক্রিয়াতেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ও উচিত। এই দাবির ভিত্তিতে আজকের সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে জনচাপের মুখে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।”
বিচার ও নিষিদ্ধ ঘোষণা
শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে দলটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে জুলাই গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতা, গুম, খুন এবং নিপীড়নের দায়ে দলটিকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ অভিযুক্ত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনীও অনুমোদিত হয়।
রাজনৈতিক ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ
বিবৃতিতে বিএনপি এটাও উল্লেখ করে যে, তারা আগেও প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ২০২৩ সালে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল দলটি।
নির্বাচনের দাবিতে অনড়
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে গুম, খুন, জুলুম সহ্য করেও তারা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশা নিয়ে লড়াই করেছে। এখনও তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি।”
তিনি সুনির্দিষ্ট একটি নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা না থাকায় জনমনে যে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে, তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।”