ঢাকা, ১১ মে ২০২৫:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের নয় মাসের মাথায় দলটির সব রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শনিবার (১০ মে) রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা-পরবর্তী এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে, যার ফলে এখন থেকে এই ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল বা তাদের অঙ্গসংগঠন এবং সমর্থকদের শাস্তির আওতায় আনতে পারবে। সংশোধিত আইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার চলাকালীন দলের যাবতীয় কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অভ্যুত্থানপন্থী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সুরক্ষা এবং ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি পরিপত্র আগামী কর্মদিবসে জারি করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে “জুলাই ঘোষণাপত্র” আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পটভূমি
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র ও জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ওই অভ্যুত্থানে নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলায় ১,৪০০ জনের বেশি নিহত হন, আহত হন কয়েক হাজার। অভ্যুত্থানের পরপরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দলটির বিচার দাবিতে সরব ছিলেন অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা। তবে অভিযুক্ত অনেক নেতা-কর্মী দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন এলাকায় হামলার ঘটনা অব্যাহত থাকায় জনমনে ক্ষোভ আরও গভীর হয়।
আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ
সর্বশেষ ৭ মে রাতে হত্যা মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ আমলে দুইবারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের গোপন দেশত্যাগের পর আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। পরদিন ৮ মে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে যমুনা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। সেখানে এনসিপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, জুলাই ঐক্য, আপ বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, কওমী শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
৯ মে শুক্রবার জুমার নামাজের পর মিন্টো রোডের ফোয়ারার কাছে আয়োজিত বড় সমাবেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। সেই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পরই শনিবার রাতে জরুরি বৈঠকে সরকারের এই সিদ্ধান্ত আসে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তকে ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘গণদাবির বিজয়’ হিসেবে দেখছেন অভ্যুত্থানপন্থী আন্দোলনের নেতারা। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। দলটির অনেক শীর্ষ নেতা এর আগেই গোপনে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।