১২ মে ২০২৫ | আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দিনের তীব্র সামরিক উত্তেজনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন, দুই দেশ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা এ সংঘাত নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল।
শনিবার ভোরে ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত আসে। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ ও পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ অভিযানে উভয়পক্ষই ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে। প্রাণ হারিয়েছে ৬০ জনের বেশি, আহতের সংখ্যা আরও বেশি।
ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশকে সাধুবাদ জানাই তাদের কূটনৈতিক প্রজ্ঞার জন্য।”
সরকারি ঘোষণা ও প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন। বিক্রম মিশ্রি জানান, “শনিবার বিকেল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—তিন ক্ষেত্রেই সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।”
পাকিস্তান জানায়, এ সমঝোতার পর দুই দেশের হটলাইন ও সামরিক যোগাযোগ চ্যানেল পুনরায় সচল করা হয়েছে।
তবে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনো পর্যন্ত কোনো তৃতীয় দেশে বিস্তৃত ইস্যুতে আলোচনা শুরুর বিষয়ে সম্মতি হয়নি। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “দুই দেশ নিরপেক্ষ স্থানে আলোচনা শুরিতে সম্মত হয়েছে।”
যুদ্ধ ঘোষণা নয়, কিন্তু সংঘাত তীব্র
আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় অনেক দেশ ‘সামরিক অভিযান’ শব্দের আশ্রয় নেয়। ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’কে তাই যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত না করলেও বাস্তবে তা তীব্র সামরিক সংঘাত হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরির জন্য এক হাজার বা তার বেশি মৃত্যুর প্রয়োজন নেই; বরং রাষ্ট্রীয় ঘোষণার মধ্য দিয়েই যুদ্ধ শুরু হয়। তবে অধিকাংশ রাষ্ট্র এখন আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায় না, কারণ এর ফলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয় এবং যুদ্ধাপরাধের দায় এড়ানো যায় না।
তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় অতীতেও বিরোধ নিরসন
১৯৪৭ সালে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০০২ সাল পর্যন্ত একাধিকবার তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ, ২০০১ সালের ভারতীয় পার্লামেন্ট হামলার পরও মার্কিন নেতৃত্বে উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছিল।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা সত্ত্বেও এটি কতটা স্থায়ী হবে, তা বলা যাচ্ছে না। কাশ্মীর পরিস্থিতি, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ চাপ যুদ্ধবিরতিকে দীর্ঘমেয়াদি করতে বাধা দিতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সামরিক বিশ্লেষক শন বেল বলেন, “দুই দেশই তাদের জনগণকে দেখাতে চাইছে যে তারা কড়া জবাব দিচ্ছে। কিন্তু এ প্রতিদানমূলক হামলার ধারা একবার শুরু হলে থামানো কঠিন হয়ে পড়ে।”
উপসংহার
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির এ ঘোষণা বিশ্বশান্তির জন্য এক আশার আলো। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা বলে দেয়, শুধু ঘোষণা নয়—বিশ্বাস ও কার্যকর আলোচনার মাধ্যমেই টেকসই শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব।