চট্টগ্রাম, ১৪ মে:
চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘হৃদপিণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর আধুনিকায়নে জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “এই হৃৎপিণ্ডকে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এতে আমরা যেমন উপকৃত হব, তারাও হবে। যারা যুক্ত হবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।”
বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিদর্শনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজ জেলা চট্টগ্রামে এটি তার প্রথম সফর।
পরিদর্শনের সময় বন্দর ও জাহাজ চলাচল খাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠন ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইউনূস। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে বিশ্বমানের বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকরভাবে যুক্ত করতে হবে। বিগত সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তব অগ্রগতি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের ভরসা। এটি ছাড়া বিকল্প নেই।”
বন্দর আধুনিকায়নে জোর উদ্যোগ
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।”
নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বন্দরের আশপাশে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের ফলে কনটেইনার জট কমবে। আগামী ছয় মাসেই দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যাবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান জানান, দেশের ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য এবং এর ৯৮ শতাংশ হয় এনসিটি দিয়ে। তবে প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতায় ২০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারে না, ফলে বিশ্ব ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে বাংলাদেশ ১০ লাখ ডলারের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
ব্যক্তিগত সংযোগ ও অন্যান্য কর্মসূচি
চট্টগ্রামের সঙ্গে নিজের শৈশবের সম্পর্ক তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “এই বন্দর আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি শৈশব থেকেই একে জানি। পরিবর্তন হচ্ছে, তবে অনেক ধীরগতিতে।”
বন্দর কার্যক্রম শেষ করে ইউনূস চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে যান। সেখানে তিনি কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন এবং অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন।
দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অংশ নেন, যেখানে তাকে সম্মানসূচক ‘ডি লিট’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে তিনি হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে তার পৈতৃক বাড়ি পরিদর্শনে যান।
সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।