ঢাকা, ১৫ মে ২০২৫:
তিন দফা দাবি আদায়ে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে কাকরাইল মসজিদের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ খালি গায়ে, কেউবা জামাকাপড় বিছিয়ে কিংবা গাছের পাতা ও ডালপালা দিয়ে সাময়িক আশ্রয় তৈরি করে রাজপথেই রাত কাটিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার সকালেও সরেজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাস্তায় বসে কিংবা সহপাঠীর কাঁধে মাথা রেখে বিশ্রাম নিচ্ছেন। কেউ আবার রাস্তায় বসেই গান গেয়ে, গল্প করে সময় পার করছেন।
বুধবার (১৪ মে) দুপুরে পুলিশি বাধা ও দমন-পীড়নের পরেও তারা রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে সেখানে থেকেই রাত কাটান।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাতভর রাজপথে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া। রাত ২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক কেএমএম রিফাত হাসান, সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার মজুমদার, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকরা।
সংগঠনের সম্প্রীতি ও সংহতি
আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে জবি শাখা ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অন্যান্য সংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সংকটে ভোগার পরও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এক শিক্ষার্থী বলেন, “গতকাল পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি, না খেয়ে দিন পার করেছি। এখন আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই—লিখিত আশ্বাস ছাড়া আমরা ক্যাম্পাসে ফিরব না।”
জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা রাস্তায় নেমেছি, রাস্তাতেই আমাদের দাবি আদায় করব। বিপ্লবের গান গেয়ে আমরা অপেক্ষা করছি।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “মার খেয়েছি, দরকার হলে আবার মার খাব; কিন্তু এবার আশ্বাসে নয়, বাস্তব ফলাফলেই আমরা ফিরব।”
শিক্ষকদের অবস্থান
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমি পিতা হয়ে সন্তানদের ফেলে যেতে পারি না। যতক্ষণ আমার শিক্ষার্থীরা এখানে থাকবে, আমি ততক্ষণ তাদের সঙ্গে থাকব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
তিন দফা দাবি
১. আবাসন না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করতে হবে।
২. ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কাটছাঁট ছাড়াই অনুমোদন করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে কাকরাইলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।