প্রবাস ডেস্ক, ২০ মে ২০২৫:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুনরায় সক্রিয় ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন মুলুক থেকে প্রেরিত প্রবাসী আয়ের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ শীর্ষক প্রস্তাবিত আইন এরইমধ্যে হাউস বাজেট কমিটিতে ১৭–১৬ ভোটে অনুমোদিত হয়েছে। পরবর্তী ধাপে এটি সিনেটে উত্থাপিত হবে।
প্রস্তাবিত এই আইনে বলা হয়েছে, মার্কিন নাগরিক ছাড়া অন্যান্য অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের ওপর কর আরোপ করা হবে। গ্রিন কার্ডধারী ও এইচ-১বি ভিসাধারীরাও করের আওতায় পড়বেন, এমনকি ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্সেও কর প্রযোজ্য হবে।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর পড়তে পারে সরাসরি প্রভাব
বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রবাসী আয় এক বড় অর্থনৈতিক সহায়তা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম প্রধান রেমিট্যান্স উৎস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৪২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা প্রায় ৫২ হাজার ২৬ কোটি টাকা (১ ডলার সমান ১২২ টাকা ধরে)। ৫% কর আরোপিত হলে বছরে প্রায় ২১.৮৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৬৬৫.৭ কোটি টাকা হ্রাস পেতে পারে দেশের বৈদেশিক আয়।
এই প্রস্তাব আইন হিসেবে কার্যকর হলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক উপায়ে অর্থ প্রেরণের প্রবণতা বাড়তে পারে, যা সরকারের রেমিট্যান্স উৎসের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বৈশ্বিক রেমিট্যান্স প্রবণতা ও বাংলাদেশের অবস্থান
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশ ছিল ভারত (১২৯ বিলিয়ন ডলার), যেখানে বাংলাদেশ ছিল ষষ্ঠ (২৬.৬ বিলিয়ন ডলার) অবস্থানে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে দেশে এসেছে ২ হাজার ৪৫৩ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২৮% বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসী আয় হলো দেশের ডলার সরবরাহের দায়বিহীন উৎস। এর বিপরীতে কোনো বিদেশি ঋণ বা রপ্তানির খরচ নেই। ফলে এই উৎসে ধাক্কা লাগলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়বে।
কর আরোপের ফলে পরিবর্তন হতে পারে প্রেরণ পদ্ধতিতে
বর্তমানে বৈশ্বিক প্রবাসী আয়ে অ্যাগ্রিগেটেড পদ্ধতি ব্যাপকভাবে চালু, যেখানে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো (যেমন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, মানিগ্রাম) ছোট ছোট উৎস থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে তা একত্র করে গন্তব্য দেশে পাঠায়।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর এই পদ্ধতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এতে প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও করের বোঝা এড়িয়ে সিস্টেম পরিবর্তনে যেতে পারে।
সারসংক্ষেপে, প্রবাসী আয়ের ওপর ট্রাম্পের ৫% কর আরোপের প্রস্তাব উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশ যেখান থেকে বছরে হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসে, সেই প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।