আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ২১ মে ২০২৫
— হঠাৎ করে ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে ছয়টি পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করার পর এবার ব্যাংকিং জটিলতার অজুহাতে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রফতানি বন্ধ রেখেছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। বুধবার (২১ মে) সকাল থেকে এ রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মৎস্য রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া জানান, এক্সপোর্ট পারমিট (ইএসপি) সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় আজ কোনও মাছ রফতানি সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে এবং আগামীকাল সকাল থেকেই আবার রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।”
এর আগে ভারত সরকার হঠাৎ করে বাংলাদেশের তৈরি ছয়টি পণ্যের স্থলপথে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে—তৈরি পোশাক, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিকসামগ্রী, সুতা ও সুতার উপজাত এবং আসবাবপত্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের আসবাব বাদে বাকি সব পণ্য আখাউড়া বন্দর দিয়ে নিয়মিত রফতানি হতো।
রফতানিতে বড় ধাক্কা
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আখাউড়া বন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি হয়েছে প্রায় ৪২৭ কোটি টাকার পণ্য। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ৪৫৩ কোটি টাকার পণ্য। রফতানিকৃত পণ্যের মধ্যে হিমায়িত মাছ, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, তুলা, চিপস, মেলামাইন সামগ্রী ও শুঁটকি উল্লেখযোগ্য।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রফতানি হতো ভারতে। প্লাস্টিক পণ্য, পিভিসি সামগ্রী, চিপস, বিস্কুট, জুস ও তুলা—এসবই নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় পড়ায় রফতানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কূটনৈতিক টানাপড়েনের প্রভাব?
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, চলমান ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন এবং এর প্রেক্ষিতে উদ্ভূত কূটনৈতিক টানাপড়েনের জেরে ভারত সরকার এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা এ সংকট নিরসনে দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছেন।
সরকারি অবস্থান
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, “আজ সকাল থেকে মাছবোঝাই কোনও ট্রাক বন্দরে আসেনি। তবে সিমেন্ট ও ভোজ্যতেল নিয়ে ১১টি গাড়ি ভারতে রফতানির জন্য বন্দরে এসেছে।”
উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম বৃহৎ আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন হিমায়িত মাছ, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, প্লাস্টিক, তুলা ও খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে রফতানি হয়ে থাকে। এই বন্দর দিয়ে রফতানিকৃত পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পৌঁছে সেখান থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে সরবরাহ করা হয়।