ঢাকা, ২১ মে ২০২৫
— বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে শ্রমবাজার সম্পর্কিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আজ রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে মালয়েশিয়া কলিং প্রক্রিয়ার আওতায় নতুন করে কর্মী প্রেরণ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে বৈঠক ঘিরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আর্থিক দুর্নীতি, সিন্ডিকেট চক্রের প্রভাব এবং হাইকমিশন পর্যায়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, বৈঠকের আগেই মালয়েশিয়া অভিমুখী শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে তথাকথিত ‘ইন্টারিম গভর্নমেন্ট সিন্ডিকেট’-এর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক নয়, কিন্তু কার্যত দেনদরবার শেষ হয়েছে। এর ফলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার আশায় থাকা শ্রমিকদের জন্য এক নতুন ‘পকেট কাটা’ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বলেও ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠক: উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা
বাংলাদেশ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকে মূলত শ্রমিক নিয়োগের নতুন চুক্তি, নিয়োগ প্রক্রিয়ার খরচ নির্ধারণ, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কর্মীদের সুরক্ষা ও নতুন কর্মী পাঠানোর নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু আলোচনার আড়ালে নিয়োগের সুযোগকে ঘিরে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেটের সক্রিয়তা গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা
এর আগেও মালয়েশিয়া কলিং প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, যেখানে একজন শ্রমিকের প্রকৃত সরকারি ফি ৭৮ হাজার টাকা হলেও দালাল ও সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৪ থেকে ৬ লাখ টাকায়। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এবারও প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে—এই প্রক্রিয়া আরও এক দফা শোষণের উৎসে পরিণত হতে যাচ্ছে।
হাইকমিশনে ‘পকেট কাটার প্রস্তুতি’?
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ঢাকায় মালয়েশিয়ান হাইকমিশন ও কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ মিশনে কর্মরত কিছু কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে নতুন মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীদের কাছ থেকে ‘বিশেষ সুবিধা’র নামে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার ও ডেপুটি হাইকমিশনার পদে কর্মরত দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রক্রিয়া শেষে তাদের বদলি বা পদত্যাগের আগেই চূড়ান্ত ‘তোলাবাজি’র প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
প্রবাসীকল্যাণ আন্দোলনের নেতা মো. কামরুজ্জামান বলেন, “মালয়েশিয়া কলিং নতুন করে চালু হওয়ায় অনেকেই আশার আলো দেখছেন। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন, নিয়োগের নামে আবারও চরম দুর্নীতি শুরু হবে। সরকারকে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নিতে হবে, নয়তো শ্রমিকদের পকেট কাটা থামবে না।”
সমাধানের পথ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে দালালমুক্ত প্রক্রিয়া গড়তে হবে এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গেও এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট চুক্তি বাধ্যতামূলক করতে হবে—যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আজকের যৌথ বৈঠকে প্রবাসীকল্যাণ সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকেও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
উপসংহার
মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যেমন রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা, তেমনি রয়েছে চরম দুর্নীতির আশঙ্কা। আজকের বৈঠক বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ—শ্রমিক স্বার্থে শক্ত অবস্থান নেওয়ার এবং পুরনো ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধ করার। সময় এসেছে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোর কার্যকর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার।