ঢাকা, ২৪ মে:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যেই আজ শনিবার সন্ধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ‘যমুনা’ সরকারি বাসভবনে পৃথকভাবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট, নির্বাচন ও সরকারের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের সময় নির্ধারিত হয়েছে। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক হবে। এই দলের নেতৃত্ব দেবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে সময় চেয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আমাদের আজকের সন্ধ্যায় বৈঠকের সময় জানানো হয়েছে।”
সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দলের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সর্বদলীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সংকট উত্তরণের চেষ্টার কথা উঠে আসে। জামায়াতের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি।
তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে অংশ নিতে শুক্রবার সকালে জামায়াতের প্রতিনিধি দল ‘যমুনা’য় গিয়েছিল, তবে তখন প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ পাননি।
বিএনপির রোডম্যাপ দাবি
বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার যদি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, তবে তাদের সহযোগিতা করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত সাড়ে ৯ মাসে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা সফল, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি করেছে। আমরা চাই সরকার সকল রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের বাস্তবসম্মত পথ খুঁজে বের করুক।”
একনেক বৈঠক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
আজ শনিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিং হবে না বলে আগেই জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তার পর শুক্রবার তিনি সারা দিন নিজের বাসভবনে অবস্থান করেন।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে আশাবাদ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আজকের বৈঠকগুলো মূলত রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে পারে। তবে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের সম্ভাবনা বা সিদ্ধান্ত এখনও অনিশ্চিত। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান এবং সরকারের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকলে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।