ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে বিলম্ব এবং নির্বাচন কমিশনকে অযথাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করাকে ‘অন্যায় ও পক্ষপাতদুষ্ট’ আচরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এ ঘটনায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।
শনিবার (২৪ মে) রাতে যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল লিখিতভাবে এসব অভিযোগ তুলে ধরে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপির অভিযোগ: উপদেষ্টাদের পক্ষপাত সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে
প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া লিখিত বার্তায় বিএনপি দাবি করে,
“ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের পরও মেয়র ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ বিলম্বিত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে অন্যায়ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার পেছনে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পক্ষপাতমূলক ভূমিকা রয়েছে।”
দলটির মতে, এসব কর্মকাণ্ড সরকারের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাচ্ছে। এছাড়া বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতির দাবি জানিয়েছে তারা।
গণ-অভ্যুত্থানের পর জনপ্রত্যাশা পূরণে সংশয়
চিঠিতে বিএনপি আরও উল্লেখ করে যে,
“২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে জনগণ একটি নিরপেক্ষ, মানবিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিল। তবে গত সাড়ে ৯ মাসে সেই প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য
বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে,
“জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্ব। অথচ এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে, যা উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।”
জাতীয় স্বার্থ ও নীতিনির্ধারণে সতর্কতা দাবি
চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর ও মানবিক করিডোর ইস্যু নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়,
“জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নেই বলে জনগণ মনে করে। এসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত অনুচিত।”
নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি
বিএনপি জোরালোভাবে দাবি জানায় যে,
“চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করতে হবে। এজন্য অবিলম্বে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।”
তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষিত হলে এবং সরকার পক্ষপাতিত্ব বজায় রাখলে বিএনপির পক্ষে আর সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
দলীয় অনুগত উপদেষ্টাদের অপসারণের আহ্বান
বিএনপি দাবি করে,
“অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। তারা সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। সরকারকে এই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দিতে হবে।”
সংস্কার ও বিচার একসঙ্গে চলতে পারে
চিঠির শেষাংশে বলা হয়,
“সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই সংস্কার ও নির্বাচন – উভয় প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে। একইসঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়াও চলমান থাকতে হবে।”
বিশ্লেষণ:
বিএনপির এ বিবৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন তারা সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে, অন্যদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের অবস্থানও পরিষ্কার করেছে। সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে রাজনৈতিক অনাস্থা ও অস্থিতিশীলতা বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে দলটি।