ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫:
চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি কর্তৃত্বে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার – বরং বন্দর ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মান আনতেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত “সিএমজেএফ টক” অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রেস সচিবের বক্তব্যের মূল কিছু অংশ:
“বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানিগুলো যেন চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় সহায়তা করতে পারে, আমরা সে ধরনের বিনিয়োগ আকর্ষণ করছি। চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। বরং আমরা চাই নির্দিষ্ট টার্মিনালে তারা বিনিয়োগ করুক, ম্যানেজমেন্টে আসুক।”
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা:
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন,
“আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা প্রধান উপদেষ্টার নেই।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, পূর্ববর্তী অন্তর্বর্তী সরকার ছিল শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তবে বর্তমানে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার ও বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজেও নিয়োজিত।
বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি:
গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,
“চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড। এটিকে বাদ দিয়ে অর্থনীতির পুনর্গঠন সম্ভব নয়। শুরু থেকেই আমরা চিন্তা করছি কীভাবে এটিকে আধুনিক, কার্যকর ও আন্তর্জাতিক মানের একটি বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা যায়।”
তিনি আরও বলেন,
“একটি দেশের হৃদপিণ্ড দুর্বল হলে পুরো শরীর টিকতে পারে না। আমাদের বন্দরের এই অবস্থা। এটিকে শক্তিশালী না করলে দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়বে।”
বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমত ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যের পর থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কিনা – তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও জনমনে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ দেখা দেয়।
-
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বন্দরের ‘বিদেশি ব্যবস্থাপনা’ পরিকল্পনার বিরোধিতা করে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়।
-
নাগরিক সমাজ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর একটি অংশ এই ইস্যুতে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করে।
-
কেউ কেউ এটিকে “রাষ্ট্রীয় সম্পদ হস্তান্তরের পথ” বলে সমালোচনা করেন।
তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বারবার স্পষ্ট করা হয়েছে যে, বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে না, বরং আধুনিকায়ন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বিনিয়োগ আহ্বান করা হচ্ছে।
বিশ্লেষণ:
বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করতে চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, গণপরীক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।