ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫:
তেল বিক্রির কমিশন বাড়ানোসহ দশ দফা দাবিতে ডাকা পেট্রোল পাম্পের কর্মবিরতি দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদ। রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘট স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল দুপুর ২টা পর্যন্ত। তবে তার আগেই বেলা ১টার দিকে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
ধর্মঘট চলাকালে ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প বন্ধ ছিল। তেল উত্তোলন, পরিবহন ও সরবরাহও সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। তবে সিএনজি ফিলিং স্টেশন খোলা থাকায় কিছুটা স্বস্তি থাকলেও গ্যাস সংকটে যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
কী বলছেন ঐক্য পরিষদের নেতারা?
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজমুল হক জানিয়েছেন,
“আমাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল তেল বিক্রির কমিশন বাড়ানো। মন্ত্রণালয় সেই দাবি মেনে নিয়ে জানিয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন,
“বাকি দাবিগুলোর সঙ্গে একাধিক মন্ত্রণালয় জড়িত। তাই আমরা তাদের দুই মাস সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
১০ দফা দাবির তালিকা
১. তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম ৭ শতাংশে উন্নীত করা
২. সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ভূমির ইজারা মাশুল পূর্বের হারে বহাল রাখা
৩. পাম্প সংযোগ সড়কের ইজারা নবায়নের আবেদন সঙ্গে পে-অর্ডার জমা দিলেই তা নবায়ন হিসেবে বিবেচনা করা
৪. শুধুমাত্র বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে ডিসপেন্সিং ইউনিট স্ট্যাম্পিং ও পরিমাপ যাচাই নিশ্চিত করা
৫. আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংকের ক্যালিব্রেশন, ডিপ রড পরীক্ষণ ফি ও নিবন্ধনপ্রথা বাতিল
৬. পরিবেশ, কলকারখানা ও ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রাপ্তির জটিল বিধান বাতিল
৭. অবৈধভাবে খোলা স্থানে বা ঘরের মধ্যে স্থাপিত মেশিনে জ্বালানি বিক্রি বন্ধ
৮. বিপণন কোম্পানির ডিলারশিপ ব্যতীত সরাসরি তেল বিক্রি বন্ধ
৯. ট্যাংকলরি চালকদের লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা
১০. যেখানে-সেখানে কাগজপত্র পরীক্ষার পরিবর্তে ডিপো গেইটে তা সম্পন্ন করা এবং আন্তঃজেলা রুট পারমিট ইস্যু নিশ্চিত করা
জনদুর্ভোগ ও প্রতিক্রিয়া
এই ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে জ্বালানি নিতে এসে অনেক চালক ও সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েন। ফেসবুকের ট্রাফিক অ্যালার্ট ও যানবাহনসংক্রান্ত গ্রুপগুলোতে অনেকেই পেট্রোল পাম্প বন্ধের কারণ জানতে চান। কেউ কেউ জ্বালানি না পেয়ে তাদের বিপদের কথাও তুলে ধরেন।
যদিও ধর্মঘট স্থগিত হওয়ায় বিকেল নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
বিশ্লেষণ:
এই ধর্মঘট স্থগিত হলেও দুই মাসের সময়সীমা সরকারের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। দাবিগুলো পূরণ না হলে আবারও দেশজুড়ে তেল সরবরাহে বিঘ্ন দেখা দিতে পারে, যা জনজীবনে বড় প্রভাব ফেলবে।