ঢাকা, ২৫ মে ২০২৫:
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রণয়নের অংশ হিসেবে আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দুই দফায় ২০টি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন।
সরকারপ্রধানের বাসভবন ‘যমুনা’-তে বিকাল ৫টা এবং সন্ধ্যা ৬টায় দুই দফায় এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর নিশ্চিত করেছে। বৈঠকে প্রতিটি দলের একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
প্রথম দফার বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা:
১. অলি আহমেদ – লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)
২. মাহমুদুর রহমান মান্না – নাগরিক ঐক্য
৩. সাইফুল হক – বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
৪. জোনায়েদ সাকি – গণসংহতি আন্দোলন
৫. হাসনাত কাইয়ূম – রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
৬. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু – আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)
৭. মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম – বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
৮. খালেকুজ্জামান – বাসদ
৯. টিপু বিশ্বাস – জাতীয় গণফ্রন্ট
১০. শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু – ভাসানী জনশক্তি পার্টি
১১. শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন – জেএসডি
দ্বিতীয় দফার বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ইসলামি দলের প্রতিনিধিরা:
১. সাদিকুর রহমান – ইসলামি বক্তা
২. সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম – ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
৩. মামুনুল হক – বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
৪. আহমদ আবদুল কাদের – খেলাফত মজলিস
৫. আজিজুল হক – হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
৬. মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী – জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
৭. নুরুল হক নুর – গণঅধিকার পরিষদ
৮. মুসা বিন ইযহার – বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি
৯. সাখাওয়াত হোসাইন রাজী – ইসলামী ঐক্যজোট
এর আগে শনিবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে তিন দলই তাদের পূর্বের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরে নির্বাচন, সংস্কার এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বক্তব্য দেন।
বৈঠকের মূল প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ:
-
বিএনপি নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় জানতে চাইলেও সে ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রধান উপদেষ্টা থেকে পায়নি।
-
জামায়াত নির্বাচনের আগে সংস্কারের রূপরেখা চাইলেও নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেনি।
-
এনসিপি বিচার, সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দাবিতে অনড় থেকেছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সকল নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুহাম্মদ ইউনূসের এই উদ্যোগ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দেরি নতুন নতুন দাবি ও জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে তারা সতর্ক করছেন।
পটভূমি:
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং পালিয়ে যাওয়ার পর, ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রাথমিকভাবে ছাত্র ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকলেও, সময়ের সাথে সাথে বিভক্তি দেখা দেয়। বিশেষ করে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’, নির্বাচনপূর্ব সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মতো ইস্যুতে এনসিপি ও বিএনপির মধ্যে মতভিন্নতা স্পষ্ট হয়।
সম্প্রতি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিলেও, সরকারিভাবে এখনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি। এর মাঝে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, যা শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা:
প্রধান উপদেষ্টার আজকের বৈঠকগুলো চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য সত্ত্বেও আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করা গেলে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম হতে পারে।