ঢাকা, ২৬ মে ২০২৫:
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অনানুগত্যের মতো অপরাধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে সরকার। রবিবার রাতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর এই অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।
অধ্যাদেশ জারির আগে দিনভর সচিবালয়ে এই সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ’-এর ব্যানারে সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে শত শত কর্মচারী অংশ নেন। সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে তারা মিছিল করেন এবং বিভিন্ন দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন।
কী আছে নতুন সংশোধনীতে?
‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’-এর সংশোধিত এই অধ্যাদেশে নতুনভাবে সংযোজন করা হয়েছে ‘৩৭ক’ ধারা। এতে বলা হয়েছে,
-
কোনো কর্মকর্তা যদি এমন আচরণ করেন যা অনানুগত্যের শামিল কিংবা অন্যদের মাঝে অনানুগত্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে,
-
বিনা ছুটিতে এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন,
-
অথবা অন্যকে কর্মবিরতিতে বাধ্য করেন কিংবা কাজে বাধা দেন – সেক্ষেত্রে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এসব অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রথমে দুই দফায় সাত দিনের নোটিস দেওয়া হবে। উপযুক্ত জবাব না পেলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ পদাবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্তের মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মচারী রাষ্ট্রপতির কাছে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া
নতুন আইনকে ‘নিবর্তনমূলক’ ও ‘মানবাধিকার পরিপন্থী’ আখ্যা দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, সংশোধিত আইনে সরকারের হাতে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অপব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা বাদিউল কবীর বলেন, “নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশে মানবাধিকার পরিপন্থি ধারা সংযুক্ত করা হচ্ছে। উপদেষ্টাগণ আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তবুও আন্দোলন চালিয়ে যাব, শান্তিপূর্ণভাবে।”
সরকারের অবস্থান
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার প্রয়োজন মনে করছে বলেই এই আইন করছে। তবে কর্মচারীদের এই বিষয়ে কিছু বলার থাকলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অভিযোগ শুনতে কমিটি
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুরনো একটি অভিযোগ যাচাই কমিটি পুনর্গঠন করেছে। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত নয় সদস্যের এই কমিটি কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া যাচাই করে সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
উপসংহার
সরকারি চাকরি আইনের সংশোধনী নিয়ে সরকার ও কর্মচারীদের মধ্যে স্পষ্ট মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। একদিকে সরকার আইনটি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় বললেও, কর্মচারীদের দাবি এটি তাদের অধিকার হরণ করে। এখন দেখার বিষয়—আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে কতটা অগ্রসর হতে পারে উভয় পক্ষ।