📍 রিয়াদ, ২৬ মে ২০২৫
দীর্ঘদিনের রক্ষণশীলতা থেকে নীতিগত বড় পরিবর্তনের পথে হাঁটছে সৌদি আরব। ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ও ২০৩০ সালের এক্সপো সামনে রেখে আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে ২০২৬ সালের মধ্যে অন্তত ৬০০টি পর্যটন স্থানে মদের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে যাচ্ছে দেশটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচতারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং নির্ধারিত প্রবাসীবান্ধব কম্পাউন্ডে লাইসেন্সপ্রাপ্তভাবে ওয়াইন, বিয়ার ও সাইডার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হবে। তবে দোকান, বাড়ি, ফ্যান জোন এবং জনসাধারণের জায়গায় মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।
এই পদক্ষেপটি সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার অংশ। এর মাধ্যমে দেশটির ‘শুষ্ক ভাবমূর্তি’ ঝেড়ে ফেলে পর্যটন ও বৈদেশিক বিনিয়োগের নতুন দুয়ার খুলে দিতে চায় রিয়াদ।
দ্য সান-এর মতে, এই পরিবর্তন বিশেষভাবে নিওম, সিন্দালাহ দ্বীপ এবং লোহিত সাগর প্রকল্প ঘিরে পরিকল্পিত। সৌদি সরকার আশাবাদী, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মতো প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যটনে তারা সমানতালে এগিয়ে যেতে পারবে।
সরকারি সূত্র বলছে, অ্যালকোহল বিক্রির জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী, অপব্যবহার প্রতিরোধ ও ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে কঠোর নিয়ম-কানুন কার্যকর থাকবে। পাশাপাশি, ২০% ABV-এর বেশি অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।
সরকারি এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“বিক্রয় কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সীমাবদ্ধ থাকবে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হবে, এবং দায়িত্বশীলতার সাথে অ্যালকোহল ব্যবস্থাপনার নিশ্চয়তা থাকবে।”
এ পদক্ষেপ সৌদির সংস্কৃতি পরিবর্তনের বার্তা নয়, বরং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের স্বাগত জানানোর একটি সীমিত ও সম্মানজনক প্রয়াস বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেছিলেন, ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে মদ নিষিদ্ধ থাকবে। এতে পশ্চিমা ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তবে সাম্প্রতিক ঘোষণায় সেই সমালোচনা প্রশমিত হবে বলে মনে করছে দেশটির অভ্যন্তরীণ মহল।
উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর আল সৌদ এর আগে বলেন,
“আমরা আমাদের সংস্কৃতির সীমানার মধ্যে থেকে অতিথিদের স্বাগত জানাতে চাই। তবে সৌদি সংস্কৃতি পরিবর্তন করে নয়।”
এই নতুন নীতির মাধ্যমে সৌদি আরব চেষ্টা করছে এমন একটি ব্যালান্স গড়ে তুলতে—যেখানে আধুনিকতা এবং ঐতিহ্যের সম্মিলন ঘটবে। পর্যটনের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও আন্তর্জাতিক মঞ্চে আধুনিক ও প্রগতিশীলভাবে তুলে ধরা যাবে।